পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রণাম মন্ত্র--কজ্জল পূরিত লোচন ভারে।

 তবু রুষিলাম রাত্রে আমার বিষয়।
 বিশেষ স্ত্রীসহ মোর ক্রীড়ার সময়।।
 স্ত্রী সহিত ক্রীড়াতে আবজ্ঞা যেবা করে।
 বলবান নাহি বুঝি রুদ্ধ করি তারে।।
 অনাহুত অনাগ্নেয় যেই দ্বিজগণ।
 তাহারে করি যে বদ্ধ নিশার কারণ।।
 আর যত জনে আমি পাই নিশাকালে।
 অবশ্য সংহার তার মম শরানলে।।
 পুরোহিত কিম্বা দ্বিজ সঙ্গেতে করিয়া।
 গৃহ হৈতে বাহিরায় দেবত স্মরিয়া।।
 সর্ব্বত্র মঙ্গল তার যথাকারে যায়।
 তাহাকে নাহিক শক্তি হিংসিতে আমায়।।
 জিতেন্দ্রিয় ধার্ম্মিক তোমরা পঞ্চজন।
 আমারে জিনিতে শক্ত হৈলে সে কারণ।।
 মম বাক্য তাপত্য শুনহ এইক্ষণে।
 সকল নিষ্ফল পুরোহিতের কারণে।।
 অর্জ্জুন বলেন শুন বলি যে তোমারে।
 তাপত্য বলিয়া কেন বলিলা আমারে।।
 জননী আমার কুন্তী আছেন সংহতি।
 তাপত্য বলিলা কেন, কেবা সে তপতী।।
 গন্ধর্ব্ব বলিল শুন ইহার কারণ।
 তব পূর্ব্ব কথা কহি শুন দিয়া মন।।
 সেইত সূর্য্যের কন্যা নাম সে তপতী।
 ত্রৈলোক্যে তাঁহার সম নাহি রূপবতী।।
 যৌবন সময়ে তাঁরে দেখি দিনকর।
 চিন্তিলেন নাহি দেখে কন্যা-যোগ্য বর।।
 তোমার উপর বংশে রাজা সংবরণ।
 নিরবধি করিলেন সূর্য্যের সেবন।।
 উপবাস নিয়ম করেন চিরকাল।
 তাহাতে হলেন তুষ্ট দেব লোকপাল।।
 সূর্য্যের সেবায় সংবরণ মহারাজা।
 রূপে অনুপম হৈল বলে মহাতেজা।।
 তাঁর রূপ গুণে তুষ্ট হৈল দিনকর।
 মনে চিন্তা কৈল তপতীর যোগ্যবর।।
 তবে কতদিনে সংবরণ নৃপবর।
 মৃগয়া করিতে গেল অরণ্য ভিতর।।
 একা অশ্বে চড়িয়া ভ্রময়ে বনে বনে।
 বহু শ্রমে অশ্ব মরে জলের বিহনে।।
 অশ্বহীন পদব্রজে ভ্রমে নরবর।
 দিক জানিবারে উঠে পর্ব্বত উপর।।
 পর্ব্বত উপরে দেখে কন্যা নিরুপমা।
 বিদ্যুতের পুঞ্জ কিবা কাঞ্চন প্রতিমা।।
 কতক্ষণে নৃপতি মধুর মৃদুভাষে।
 মদনে পীড়িত হৈয়া গেল কন্যা পাশে।।
 রাজা বলে কহ শুনি মম্মথমোহিনী।
 নির্জ্জন কাননে কেন আছ একাকিনী।।
 বিবিধ বিনয় করি ভূপতি কহিল।
 কিছু না বলিয়া কন্যা অন্তর্ধান হৈল।।
 মেঘের উপর যেন বিদ্যুৎ লুকায়।
 উন্মত্ত হইয়া রাজা চারিদিকে চায়।।
 অন্তরীক্ষে থাকিয়া সে তপতী দেখিল।
 ডাক দিয়া তপতী যে রাজারে বলিল।।
 কি কারণে অচেতন হৈলা নৃপবর।
 উঠহ ভূপতি তুমি যাও নিজ ঘর।।
 চেতন পাইয়া রাজা উর্দ্ধমুখে চায়।
 অন্তরীক্ষে দেখে কন্যা বিদ্যুতের প্রায়।।
 রাজা বলে কামশরে মোহিত শরীর।
 ইচ্ছা করি ধৈর্য্য ধরি চিত্ত নহে স্থির।।
 তোমা বিনা অন্যে দেখি রাখিব জীবন।
 কদাচিৎ নহে হেন অবশ্য মরণ।।
 পাইলাম প্রাণ, শুনি তোমার বচন।
 অনুগ্রহ কৈলা মোরে হেন লয় মন।।
 মম প্রতি যদি দয়া হইল তোমার।
 আলিঙ্গন দিয়া প্রাণ রাখহ আমার।।
 পরিচয় আমার শুনহ নরপতি।
 সূর্য্যকন্যা আমি নাম ধরি যে তপতী।।
 তপঃক্লেশ ব্রত কর সূর্য্য আরাধন।
 সূর্য্য দিলে আমারে সে পাইবা রাজন।।
 এত বলি তপতী হৈল অন্তর্দ্ধান।
 পুনঃ পড়ে নরপতি হইল অজ্ঞান।।