পাতা:কাশীনাথ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাশীনাথ S8 সে বুকে কত স্নেহ, কত ভালবাসা, যেন তাহ ফুটিয়া বাহির হইত ; আবার ভাল হইবার পর কমলা পথের মাঝে পড়িলেও কাশীনাথ ফিরিয়া চাহে না, মুখ তুলিয়া দেখে না। আপনার মনে আপনার কৰ্ম্মে চলিয়া যায়। কমলা অভিমান করিয়া দুইদিন কথা না কহিয়া দেখিয়াছে, কোন ফল নাই ; কাশীনাথ কাছে আসিয়া আবার চলিয়া যাছত ; না সাধিত, না কঁাদিত, না কথা কহিত । আবার কথা কহিলে হাসিয়া কথা কহিত ; না কোনদিন বিরক্তি প্ৰকাশ করি ত, না কোনদিন জিজ্ঞাসা করিত, কেন দুই দিন কথা কহ নাই, কেন রাগ করিয়াছিলে ? কমলা দিন-কতক পরে নিজের মনে পরামর্শ আঁাটিয়া এরূপ ভাব ধরিল, যেন সে তাহার উদাসীন স্বামীটিকে জানাইতে চাহে, তুমি আমাকে উপেক্ষা করিলে আমিও উপেক্ষা করিতে জানি । আর এত তোমাকে ভালবাসি না যে, তুমি মাড়াইয়া যাইবে, আর আমি ধূলার মত তোমার চরণতলে জড়াইয়া থাকিব । কমলা দেখা হইলে অন্য মনে মুখ ফিরাইয়া গম্ভীরভাবে চলিয়া যায় ; যেন প্ৰকাশ করিতে চাহে, তোমাকে দয়া করিয়া স্বামী করিয়াছি বলিয়া এমন মনে করিও না যে, তোমার পায়ে প্ৰাণ পড়িয়া আছে, এবং সেই জন্য যখনই দেখা হইবে তখনই মিষ্ট হাসিয়া গ্ৰীতি-সম্ভাষণ করিব। আমার কাজের সময় সামনে পড়িলে আমিও দেখিতে পাই না। যখন সে কোন দাসদাসীকে তিরস্কার করিতে থাকে। তখন কাশীনাথ দৈবাৎ যদি কোনও কথা বলিয়া ফেলে, তাহা হইলে সে কথা আদৌ কানে না। তুলিয়া যাহা বলিতেছিল, তাহাই বলিতে থাকে ; যেন বলিতে চাহে, আমার দাস, আমার দাসী, আমার বাড়ী, আমার ঘর ; যাহাকে যাহা খুন্সী বলিব, তুমি তাহাতে অযাচিত মধ্যস্থ হইতেছ। কেন ? কিন্তু ইহাতে কি তৃপ্তি হয় ? এমন করিয়া কি বাসনা পুরে ? তৃপ্তি হইতে পারিত যদি কাশীনাথকে একবিন্দু টলাইতে পরিত্ন । ਦੋ কর, সে তাহার প্রশান্ত গম্ভীর মুখখানি লইয়া পরিষ্কার বুঝাইয়া দেয় যে, সে আপনাতে আপনি নিশ্চল বসিয়া