পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬২
কুরু পাণ্ডব
[১০

চতুর্দ্দিকে পলায়ন করিলে কৌরব-ব্যূহ একেবারে শিথিল হইয়া পড়িল।

 ইতিমধ্যে মহামতি ভীষ্ম রণক্ষেত্রে প্রত্যাবর্ত্তনপূর্ব্বক এই দৃশ্য অবলোকন করিয়া দ্রোণাচার্য্যকে কহিলেন—

 হে দ্বিজোত্তম! এই দেখ ধনঞ্জয় কৌরব-সৈন্যমধ্যে অতি ভীষণ কার্য্য করিতেছেন, অদ্য আর সৈন্যগণকে পুনর্ব্যূহিত করিবার উপায় দেখিতেছি না; সূর্য্যও অস্তাচল-চূড়াবলম্বী হইয়াছেন; অতএব এক্ষণে অবহারের আদেশ প্রদানই কর্ত্তব্য।

 অনন্তর কৌরবসেনা যুদ্ধপরাঙ্মুখ হইলে কৃষ্ণার্জ্জুন মহা আনন্দে শঙ্খধ্বনি করিয়া সে দিবসের যুদ্ধকার্য্য শেষ করিলেন।

 পরদিনের যুদ্ধে অর্জ্জুনের ভীষণ প্রতাপ অসহ্য় হইয়া উঠিল। নীরদের বারিবর্ষণের ন্যায় কৌরবগণের উপর তিনি বাণ পরিত্যাগ করিতে আরম্ভ করিলেন। তাহারাও ব্যথিত হইয়া পুনরায় পলায়নের উপক্রম করিল। তখন দুর্য্যোধন ক্ষুণ্ণমনে ভীষ্মের নিকট উপস্থিত হইয়া কহিলেন—

 হে পিতামহ! আপনি ও মহাস্ত্রবিৎ আচার্য্য থাকিতে কৌরবসেনা পলায়ন করিতেছে, ইহা নিতান্ত বিসদৃশ বোধ হইতেছে। আমাদের সমূহ বিপদ দেখিয়াও যখন উপেক্ষা করিতেছেন, তখন স্পষ্টই বোধ হইতেছে যে, পাণ্ডবগণকে অনুগ্রহপ্রদর্শন করাই আপনার উদ্দেশ্য। আপনার এই অভিপ্রায় পূর্ব্বে জানিতে পারিলে আমি কদাপি এ সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইতাম না।