পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
১২

 “উঃ এত নিষ্ঠুর তুমি কেমন ক‘রে হ’লে সুকুমারী? আমার প্রতি এতটুকু টানও কি আর তোমার নেই? অথচ, আমি তোমার জন্যে অহর্নিশ কেঁদে ফিরছি!”

 অদৃশ্য হস্তের সবল অক্ষরে লিখিত হইল, “তা জানি, আর সেই জন্যেই আমি তোমার ডাকে সাড়া দোব না স্থির করেছি। মৃতের পিছনে ছুটে বেড়ালে ইহপরলোকের কোন উপকারই নেই। তার চেয়ে মেয়েটার ভাল বিয়ে,—তা’তে ভবিষ্যতে তোমারও মঙ্গল হবে।”

 চন্দ্রকুমার সুগভীর অভিমানভরে কহিয়া উঠিলেন, “তুমিই যদি আমায় ভুলে যাও, তবে ইহপরলোকে ভাল মন্দ কি হলো না হলো, কি আমার তাতে বয়ে গেল? চাই না আমার ভবিষ্যতের মঙ্গল! তুমি আমায় ত্যাগ করো না।”

 অতি দুঃখিত থামা থামা কলমে এই কথাগুলি লিখিত হইল,— “নিয়তি অখণ্ডনীয় হ’লেও তার নিমিত্ত কারণ আমিই তবে হলেম! কিন্তু কি করবো এ আমারও যে নিয়তি! এখনও শান্ত হ’বার চেষ্টা করো, গুরুমন্ত্র গ্রহণ করো, তাতে রুচি না হয় এই মন্ত্র জপো।”

 “এই মন্ত্র” সে লিখিয়া দিল।—“মন দিয়ে সর্ব্বদা জপ করো, না করলে দারুণ অমঙ্গল ঘটতে পারে। সাবধান করে দিচ্চি, এখনও আত্মস্থ হও। আমি চল্লেম,—আর ডেকো না। খুকি! তুই একটিও কথা বলতে পারলিনে মা? তোকে দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হচ্চে বিস্তর! আমি তোমায় আশীর্ব্বাদ করছি, তোমার শেষে ভালই হবে।”

 চন্দ্রকুমার উচ্চ চীৎকারে ডাকিয়া উঠিলেন, “সুকুমারী! সুকুমারী! সুকু! সুকু! সুকু!” তারপর আছড়াইয়া মাটিতে পড়িয়া গিয়া সম্পূর্ণ চেতনা হারাইলেন; যখন সংজ্ঞা ফিরিল, মস্তিস্ক তাঁর সম্পূর্ণরূপেই বিকৃত হইয়া গিয়াছে।