পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
১৬

ব্যাপারেরই পুনরভিনয় করা। উঃ নিদারুণ,— নিদারুণ সে সব দৃশ্য, সহ্য করা সে-যে কি কঠিন!

 ছাকনী দিয়া চা ছাকিতে ছাকিতে সুনীতি ডাকিল, “এসো বাবা! ততক্ষণ মাখম-মিছরিটা খেয়ে নাও।” সে অন্য হাত দিয়া কাঁচের প্লেটে সাজানো মাখম-মিশ্রী, খোসা-ছাড়ানো বাদাম ও ভিজে মুগের সঙ্গে বাটা চিনি এবং ক্রীম-লাগানো টোষ্ট দুখানি বাপের চেয়ারের দিকে ঠেলিয়া দিল।

 চন্দ্রকুমার কবিরাজী মতের এবং পূর্ব্বাভ্যাস মতন ঠাণ্ডা ও গরম প্রেসক্রিপসন একসঙ্গেই ব্যবহার করিয়া থাকেন, আপত্তি করিয়া কোন লাভই ছিল না, তাই সুনীতি করে নাই। মেয়ের সহজ কণ্ঠস্বরে ও মুখভাবে চোখ তুলিয়া দেখিয়া তাঁহার একটু যেন সঙ্কোচ কাটিল, অগ্রসর হইয়া আসন গ্রহণ করিতে করিতে স্নেহ-করুণ কণ্ঠে কহিয়া উঠিলেন, “দেখিস্ মা! হাত পোড়াস্‌নি যেন, ঢের সময় আছে, তোকে অত ব্যস্ত হতে হবে না।”

 সুনীতির চাপা ঠোঁটের কোণের কাছে একটি বিন্দু দুঃখের হাসি অতি সন্তর্পণে ফোটে ফোটে হইয়াও সাহস করিয়া ফুটিতে পারিল না, সক্ষোভে সেটুকুকে সে ভিতরে চাপিয়া লইতেই মনে পড়িল এই কথাটাই—তার বাপ ইতঃপূর্ব্বে এক পেয়ালা তৈরি চা তার দিকে অগ্রসর করিয়া দিতে গেলেও কতবারই না তাকে আন্তরিকভাবেই বলিয়াছেন। “বাবা, কিচ্ছু খাচ্চো না যে, খাও—”

 চন্দ্রকুমারের যেন চট্‌কা ভাঙ্গিয়া গেল, “অ্যাঁ, খাচ্চি না! হ্যাঁ, হ্যাঁ, খাচ্চি নাই তো, নাঃ—খাবো না, তুই কি রকম রোগা হয়ে গেছিস্, আর আমি ভাল-মন্দ খেয়ে খেয়ে দিনকের দিন পেঁড়ো-সুর হচ্চি,—কেন? দেখছিস্ না? কত মোটা হয়ে গেছি। তোর মা যদি এখন আমায় দেখে, চিনতে পারে?—কক্ষনো পারে না।”