তিন
কেন্দ্রস্থ-সূর্য্যকে বেষ্টন করিয়া যেমন সৌরজগৎ নিয়ন্ত্রিত হইতেছে, আনন্দনাথের পিতৃদেব দেশবিখ্যাত মহামনীষী পৃথ্বীদেবকেও তাঁহার পরিবারের সৌরপতি বলিলে অত্যুক্তি হয় না। মহাদেবের মত ধবলকান্তি, উন্নত শরীর, অপুর্ব্বদর্শন, হাস্যম্মিত প্রসন্ন মুখ প্রবরকে দর্শন করিলে স্বতই দর্শকের চিত্ত শ্রদ্ধার ভারে নত হইয়া পড়িতে বাধ্য। একদা সংযুক্ত বঙ্গ-বিহার-উড়িষ্যার সর্ব্বাপেক্ষা প্রয়ােজনীয় বিষয়গুলি ইঁহারই হস্তে নিয়ন্ত্রিত হইয়াছিল। তখনকার দিনের সম্রাটতুল্য ছােট লাটদের মধ্যে কেহ কেহ এঁর সঙ্গে পরামর্শ না করিয়া কোন গুরুতর কার্য্যের মীমাংসা করিতেন না, ইংরাজ উচ্চ রাজপুরুষ মাত্রেই এঁকে একটু বিশেষরূপ সম্মান করিয়া চলিতেন। সে-সব দিনে অনেক বড়-ঘরানা ইংরাজ এদেশে আসিতেন, বড় বড় পণ্ডিতও তখন সিবিল সার্ভিস চাকুরীতে নিতান্ত সংখ্যাল্প থাকিতেন না, তাঁরা পৃথ্বীদেবের সহিত পরিচিত হইবার জন্য স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া সুযােগ সন্ধান করিতেন, পরিচিত হইতে পারিলে সম্মানিত বােধ করিতেন। আনন্দনাথের উপরওয়ালা সাহেব যিনি যখনই আসিয়াছেন, নিজে তাঁর বাড়ী আসিয়া তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে ভুল করেন নাই। ভিজিট রিটার্ণের সময় সুদর্শনা তার দাদুর সঙ্গে প্রায়ই থাকিত। আলাের পিছনে ছায়ার মতই সে দাদুর অনুগামিনী। বড় কঠিন দীর্ঘকালব্যাপী রােগ ভােগ করিয়া প্রায় মৃত্যুদ্বার-সমাসীন হইয়াও সে বহু চিকিৎসা এবং অসম্ভব যত্ন সেবায় পুনর্জন্ম পাইয়াছে বলিয়াই হয়ত সকলের কাছেই আদরটা একটুখানি তার বেশী হইয়া পড়িয়াছিল। তবে এ পরিবারের সে “আদর” দেওয়া ছিল না—যে আদরে বাড়ীর মেয়েরা “জল ঘটিটি