অতসী কোন ঔৎসুক্য প্রকাশ করিল না, শুধু তার শুষ্ককণ্ঠ মধ্য হইতে একটা অস্পষ্ট নীরস ধ্বনি বাহির হইল, ―“ও!”
“কলকাতায় গিয়ে ভাবছি কল-কারখানায় কাজ করবো, খাটতে পারলে সেখানে একশ টাকা রোজগার করা যায় সবাই বলে।”
অতসী এইবার একটা কিছু বলিবে—পরাণ মনে মনে এরূপ আশা করিয়াছিল; সে কিন্তু কিছুই বলিল না, যেমন তেমনই দাঁড়াইয়া রহিল। পরাণের গ্রাম ত্যাগের খবরে হয়ত একটুখানি স্বস্তিবোধ যেন তার মধ্যে ফিরিয়া আসিতেছিল। এই ব্যাপার লইয়া তার উপরেও ঘরে বাহিরে যে একটা কুৎসিত রটনা না চলিতেছিল এমন নয়।
“তুমি আমার সঙ্গে যাবে অতসী? দুজনায় আমরা আবার নতুন করে ঘর বাঁধবো, তুমি সেখানে—”
“আ-মি?” অতসী সহসা বেতসীর মতই সঘনে কাঁপিয়া উঠিল। প্রায় রুদ্ধশ্বাসে হাঁপাইয়া সে আর্ত্তকণ্ঠে বলিয়া ফেলিল, “তোমার সঙ্গে? ওরে বাবা! না—না, তোমার সঙ্গে আমি যাবো না—যাবো না।”
পরাণের বুকের ভিতর একটা বোমা যেন সে নিজের হাতে দাগিয়া দিল; বহুক্ষণ পরে ঝাপসা দৃষ্টি পরিষ্কার হইয়া আসিলে সে চারিদিকে চাহিয়া দেখিল অতসী কোথাও নাই। অদূরে তাদের খিড়কী দরজায় খড়াৎ করিয়া খিল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিতর হইতে নারীকণ্ঠের শব্দ শোনা গেল,—
“কিরে আতু! অমন করে ছুটে এলি ক্যানে? হলো কি তোর?”
“ওমা, সেই খুনে এয়েছে গো! বলে, ‘আমার সঙ্গে চল্’! উঃ, ভয়ে আমার গা,—হাত দে দেখ না, এখনও কাঁপচে গো!”
“ঘরকে আসুক না তোর বাপ, পুলিশকে খবর দিতে বলছি!