করিল। আমি বিষম ফাঁপরে পড়িলাম। কাহারও নাম জানি না সুতরাং কি বলিয়া ডাকিব স্থির করিতে না পারিয়া, পুনরায় চিৎকার করিতে লাগিলাম। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে বয়োজ্যেষ্ঠ সন্ন্যাসী চক্ষু উন্মীলন করিল, আমাকে পরিষ্কার বাঙ্গালা ভাষায় জিজ্ঞসা করিল, “কেন বাপু! এখানে এত গোলযোগ করিতেছ? গোলমালের ভয়ে আমরা লোকালয় ছাড়িয়া এই নির্জ্জন বনের মধ্যে আশ্রয় লইয়াছি। আর তুমি কিনা স্বচ্ছন্দে এখানে আসিয়া আমাদের ধ্যান ভঙ্গ করিতেছ। আকৃতি দেখিয়া তোমায় জ্ঞানবান্ বলিয়া বোধ হইতেছে, কিন্তু এ কি কাজ তোমার!”
গৌরীর মুখে যাহা শুনিয়াছিলাম, তাহাতে তাহাদের উপর কিছুমাত্র ভক্তির উদ্রেক হয় নাই। বরং তাহার মুখে ঐ সকল কথা শুনিয়া আমার ক্রোধ হইল। রাগ সম্বরণ করিয়া ঈষৎ কর্কশ স্বরে বলিলাম, “আর তোমার সাধুগিরিতে কাজ নাই। এখন ওঠ, আমার সঙ্গে থানায় চল।”
থানার নাম শুনিয়া সন্ন্যাসীর কিছুমাত্র ভয় হইল না। সে হাসিয়া উঠিল, পরে বলিল, “চল, আমাদিগকে যেখানে লইয়া যাইবে সেইখানেই যাইব। কিন্তু সেখানে যেন একটু নির্জ্জন স্থান পাই, আমরা যেন নির্ব্বিবাদে ধ্যান করিতে পারি।”
আমি হাসিয়া উঠিলাম। হাসিতে হাসিতে বলিলাম, “এখন বুজরুকি রাখ ঠাকুর! সকালে যে কাণ্ড করেছ, তাহাতে শীঘ্রই চিরধ্যানে নিমগ্ন হতে হবে। আগে উঠ, পরে এই দুই জনকে নিয়ে শীঘ্র আমার সঙ্গে এস।”
সন্ন্যাসী গম্ভীরভাবে বলিল, “সত্যই কি আমাদিগকে তোমার সহিত যাইতে হইবে? সকালে কি কাণ্ড করেছি বাবা?”