পাতা:গল্পকল্প - পরশুরাম.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অটলবাবুর অন্তিম চিন্তা

রয়েছে, তাতে দেখা যায় তাঁর খরচের তুলনায় জমাই বেশী, মোটের উপর তিনি বঞ্চিত হন নি। অন্য লোকে যাই বলুক, তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারেন।

 কিন্তু একটা খটকা দেখা যাচ্ছে। তিনি নিজে ভাগ্যবান হ’লেও যারা তাঁর অত্যন্ত প্রিয়জন ছিল তারা হতভাগ্য, অনেকে বহ‍ু দ‍ুঃখ পেয়ে অকালে মরেছে। তাদের দুঃখ অটলবাবু নিজের ব’লেই মনে করেন এবং তা লোকসানের দিকে ফেললে লাভের অঙ্ক খূব ক’মে যায়। শুধু তাই নয়, অন্যান্য যে সব লোককে তিনি আজীবন আশেপাশে দেখছেন তাদেরও অনেকে কষ্ট ভোগ করেছে। পূর্বে তাদের কথা তিনি ভাবেন নি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তারাও নিতান্ত আপন জন। তাদের দুঃখও যদি নিজের বলে ধরেন তবে জমাখরচ কষলে লোকসানই দেখা যায়।

 অটলবাবু স্থির করতে পারলেন না তিনি জীবনে মোটের ঊপর সুখ বেশী পেয়েছেন কি দুঃখ বেশী পেয়েছেন। তিনি যদি ভক্ত হতেন তবে বলতে পারতেন—‘ধন্য হরি রাজ্যপাটে, ধন্য হরি শ্মশানঘাটে’। ভগবান যা করেন তা মঙ্গলের জন্যই করেন—এই খৃীষ্টানী প্রবোধবাক্যে তিনি বিশ্বাস করতে পারেন নি। অটলবাবু শুনেছেন, যিনি পরমহংস তিনি সমস্ত জীবের সুখদদুঃখ নিজের ব’লেই মনে করেন; সুখ আর দুঃখে কাটাকাটি হয়ে যায়, তার ফলে তিনি সুখীও হন না। দঃখীও হন না। কিন্তু অটলবাবু পরমহংস নন, তা ছাড়া

২৫