পাতা:গল্পকল্প - পরশুরাম.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পকল্প

 অটলবাবুর মনে পড়ল, বহ‍ুকাল পূর্বে কলেজে পড়বার সময় মৃচ্ছকটিকের একটি শ্লোক তাঁর ভাল লেগেছিল

সুখং হি দুঃখান্যনুভুয় শোভতে
ঘনান্ধকারেঙ্বিব দীপদর্শনম্।
স‍ুখাত্তু ষো যাতি নরো দরিদ্রতাং
ধৃতঃ শরীরেণ মৃতঃ স জীবতি॥

 —দ‍ুঃখ অনুভবের পরই সংখ শোভা পায়, যেমন ঘোর অন্ধকারে দীপদর্শন। কিন্তু যে লোক সুখভোগের পর দরিদ্রতা পায় সে শরীর ধারণ ক’রে মৃতের ন্যায় জীবিত থাকে।

 অটলবাবু ভাবলেন, ভুল, মস্ত ভুল। তিনি প্রথম ও মধ্য জীবনে বিস্তর সুখভোগ করেছেন, কিন্তু শেষ বয়সে অনেক দুঃখ পেয়েছেন। তাঁকে স্ত্রীপুত্রাদি আত্মীয়বিয়োগের শোক এবং ব্যবসায়ে বড় রকম লোকসান সইতে হয়েছে, সর্বস্বান্ত না হ’লেও তিনি আগের তুলনায় দরিদ্র হয়েছেন। বয়স যত বাড়ে সময় ততই ছোট হয়ে যায়; অন্তিম কালে অটলবাবুর মনে হচ্ছে তাঁর সমস্ত জীবন মুহূর্তমাত্র, সমস্ত সুখ দুঃখ তিনি এক সঙ্গেই ভোগ করেছেন এবং সবই এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সুখভোগের পর দুঃখ পেয়েছেন—শ‍ুধু এই কারণেই সুখের চেয়ে দুঃখকে বড় মনে করবেন কেন? জীবনের খাতায় লাভ-লোকসান দুইই পাকা কালিতে লেখা

২৪