পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহামায়া ఫిEఏ ছেলেটি তাঁহাকেই আপনার জীবনের আদশপথল করিয়াছে। সাহেব অবিবাহিত ছিলেন। ইতিমধ্যে পিসিরও মৃত্যু হইল । এ দিকে সাধ্যাতীত ব্যয় ব্যতীত মহামায়ার জন্যও অনরপে কুলসম্পন্ন পাত্র জোটে না। তাহারও কুমারীবয়স ক্ৰমে বাড়িতে লাগিল। পাঠকদিগকে বলা বাহুল্য যে, পরিণয়বন্ধন যে দেবতার কায তিনি যদিও এই নরনারীযুগলের প্রতি এযাবৎ বিশেষ অমনোযোগ প্রদর্শন করিয়া আসিতেছেন, কিন্তু প্রণয়বন্ধনের ভার যাঁহার প্রতি তিনি এতদিন সময় নষ্ট করেন নাই। বন্ধ প্রজাপতি যখন ঢালিতেছিলেন, যবক কন্দপ তখন সম্পণে সজাগ অবস্থায় ছিলেন। ভগবান কন্দপের প্রভাব ভিন্ন লোকের উপর ভিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়। রাজীব তাহার প্ররোচনায় দটো-চারটে মনের কথা বলিবার অবসর খাজিয়া বেড়ায়, মহামায়া তাহাকে সে অবসর দেয় না— তাহার নিস্তৰ গম্ভীর দটি রাজীবের ব্যাকুল হৃদয়ে একটা ভীতির সন্টার করিয়া তোলে। আজ শতবার মাথার দিব্য দিয়া রাজীব মহামায়াকে এই ভাঙা মন্দিরে আনিতে কৃতকাৰ্য হইয়াছে। তাই মনে করিয়াছিল, যতকিছু বলিবার আছে আজ সব বলিয়া লইবে, তাহার পর হয় আমরণ সুখ নয় আজীবন মাতু । জীবনের এমন একটা সংকটের দিনে রাজীব কেবল কহিল, “চলো, তবে বিবাহ করা যাউক ।” এবং তার পরে বিসমতপাঠ ছাত্রের মতো থতমত থাইয়া চুপ করিয়া রহিল। রাজীব যে এরুপ প্রস্তাব করিবে মহামাযা যেন আশা করে নাই। অনেক ক্ষণ তাই নীরব হইয়া রহিল। মধ্যাহ্নকালের অনেকগুলি অনিদিষ্ট কর্ণধৰনি আছে, সেইগুলি এই নিস্তব্ধতায় ফুটিযা উঠিতে লাগিল। বাতাসে মন্দিরের অধীসংলগ্ন ভাঙা কবাট এক-একবার অত্যন্ত মন্দমন্দ আতসবর-সহকারে ধীরে ধীরে থলিতে এবং বন্ধ হইতে লাগিল । মন্দিরেব গবাক্ষে বসিয়া পায়রা বকম বকমা করিয়া ডাকে, বাহিরে শিমুলগাছের শাখায বসিয়া কাঠঠোকরা একঘেয়ে ঠক ঠক শব্দ করে, শাক পত্ররাশির মধ্য দিয়া গিরগিটি সর সর শব্দে ছটিয়া যায, হঠাৎ একটা উষ্ণ বাতাস মাঠের দিক হইতে আসিয়া সমস্ত গাছের পাতার মধ্যে ঝর ঝর করিয়া উঠে এবং হঠাৎ নদীর জল জাগিযা উঠিযা ভাঙা ঘাটের সোপানের উপর ছলাং ছলাং করিয়া আঘাত করিতে থাকে। এই সমস্ত আকস্মিক অলস শব্দের মধ্যে বহদের তরতল হইতে একটা সাহসী না হইয়া মন্দিরের ভিত্তির উপর ঠেস দিয়া দাঁড়াইয়া একপ্রকার শ্রান্ত সবগুনাবিস্টের মতো নদীর দিকে চাহিয়া আছে। কিছুক্ষণ পরে মুখ ফিরাইয়া লইয়া রাজীব আর-একবার ভিক্ষকভাবে মহামায়ার মুখের দিকে চাহিল। মহামায়া মাথা নাড়িয়া কহিল, "না, সে হইতে পারে না।” মহামায়ার মাথা যেমনি নড়িল রাজীবের আশাও অমনি ভূমিসাৎ হইয়া গেল। কারণ, রাজীব সম্পণে জানিত, মহামায়ার মাথা মহামায়ার নিজের নিয়মানসারেই নড়ে; আর-কাহারও সাধ্য নাই তাহাকে আপন মতে বিচলিত করে। প্রবল কুলাভিমান মহামায়ার বংশে কত কাল হইতে প্রবাহিত হইতেছে— সে কি কখনো রাজীবের মতো অকুলীন ব্রাহয়ণকে বিবাহ করিতে সম্মত হইতে পারে। ভালোবাসা এক এবং বিবাহ করা আর। যাহা হউক, মহামায়া বঝিতে পারিল, তাহার নিজের বিবেচনা