পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨રક গল্পগুচ্ছ জয়কালী অবিচলিত মুখে কহিলেন, “না।” মোক্ষদা ফিরিয়া গেল। অদরবতী কুটিরের কক্ষ হইতে নলিনের করণ কুন্দন ক্ৰমে ক্ৰোধের গজনে পরিণত হইয়া উঠিল-- অবশেষে অনেকক্ষণ পরে তাহার কাতরতার শ্রান্ত উচ্ছাস থাকিয়া থাকিয়া জপানরতা পিসিমার কানে আসিয়া ধৰ্মনিত হইতে লাগিল । নলিনের আতকণ্ঠ যখন পরিশ্রান্ত ও মৌনপ্রায় হইয়া আসিয়াছে এমন সময় আর-একটি জীবের ভীত কাতরধৰনি নিকটে ধৰনিত হইতে লাগিল এবং সেই সঙ্গে ধাবমান মনষ্যের দরবতী চীৎকারশব্দ মিশ্রিত হইয়া মন্দিরের সম্মুখস্থ পথে একটি তুমলে কলরব উত্থিত হইল। সহসা প্রাঙ্গণের মধ্যে একটা পদশব্দ শোনা গেল। জয়কালী পশ্চাতে ফিরিয়া দেখিলেন, ভূপ্যাসত মাধবীলতা আন্দোলিত হইতেছে। সরোষকণ্ঠে ডাকিলেন, “নলিন " কেহ উত্তর দিল না। বুঝিলেন, অবাধ্য নলিন বন্দীশালা হইতে কোনোক্ৰমে পলায়ন করিয়া পনরায় তাঁহাকে রাগাইতে আসিয়াছে। তখন অত্যন্ত কঠিনভাবে অধরের উপরে ওঠ চাপিয়া বিধবা প্রাঙ্গণে নামিয়া আসিলেন। লতাকুঞ্জের নিকট পনরায় ডাকিলেন, "নলিন " উত্তর পাইলেন না। শাখা তুলিয়া দেখিলেন, একটা অত্যন্ত মলিন শকের প্রাণভয়ে ঘন পল্লবের মধ্যে আশ্রয় লইয়াছে। ষে লতাবিতান এই ইস্টকপ্রাচীরের মধ্যে বন্দবিপিনের সংক্ষিপত প্রতির,প যাহার বিকসিত কুসমমঞ্জরীর সৌরভ গোপীবাদের সগন্ধি নিশ্বাস সমরণ করাইয়া দেয় এবং কালিন্দীতীরবতী সুখবিহারের সৌন্দযাসবগুন জাগ্ৰত করিয’ তোলে-- বিধবাল সেই প্রাণাধিক যত্নের সুপবিত্র নন্দনভূমিতে অকস্মাৎ এই বীভৎস ব্যাপার ঘটিল । পজারি ব্রাহয়ণ লাঠি হতে তাড করিয়া আসিল । জয়কালী তৎক্ষণাৎ অগ্রসর হইয়া তাহাকে নিষেধ করিলেন এবং দ্রুতবেগে ভিতর হইতে মন্দিরের দ্বার রন্ধ করিয়া দিলেন। অনতিকাল পরেই সরোপানে-উন্মত্ত ডোমের দল মন্দিরের বারে উপস্থিত হইয়া তাহাদের বলির পশর জন্য চীৎকার করিতে লাগিল। জয়কালী রন্ধ বারের পশ্চাতে দাঁড়াইয়া কহিলেন, “যা বেটারা, ফিরে যা ! আমার মন্দির অপবিত্র করিস নে ৷” ডোমের দল ফিরিয়া গেল। জয়কালী ঠাকুরানী ষে তাঁহার রাধানাথ জীউর মন্দিরের মধ্যে অশুচি জন্তুকে আশ্রয় দিবেন, ইহা তাহারা প্রায় প্রত্যক্ষ দেখিয়াও বিশ্বাস করিতে পারিল না। এই সামান্য ঘটনায় নিখিল জগতের সব জীবের মহাদেবতা পরম প্রসন্ন হইলেন : ক্ষদ্র পল্লীর সমাজনামধারী অতিক্ষদ্র দেবতাটি নিরতিশয় সংক্ষদ্ধ হইয়া | শ্রাবণ ১৩০১