পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sくぬO গল্পগুচ্ছ সাহেব ঈষৎ হাসিয়া অগত্যা এই গলায়-মাদলি-পরা কৃশকায় শ্যামবর্ণ গভীর প্রশান্ত মদস্বেভাব বাঙালির ছেলেটিকে সঙ্গে লইতে রাজি হইলেন। তখন শশী বিদায় লইবার সময় বালক তাহার অচিল চাপিয়া ধরিল। সাহেব কহিলেন, “বাবা, তোমার কোনো ভয় নেই— এসো।” ঘোমটার মধ্য হইতে অবিরল অশ্র মোচন করিতে করিতে শশী কহিল, “লক্ষয়ী ভাই, যা ভাই— আবার তোর দিদির সঙ্গে দেখা হবে।” এই বলিয়া তাহকে আলিঙ্গন করিয়া, তাহার মাথায় পিঠে হাত বলাইয়া, কোনোমতে আপন অঞ্চল ছাড়াইয়া তাড়াতাড়ি সে চলিয়া গেল ; আমনি সাহেব নীলমণিকে বাম হস্তের বারা বেস্টন করিয়া ধরিলেন, সে “দিদি গো দিদি" করিয়া উচ্চৈঃস্বরে ক্ৰন্দন করিতে লাগিল— শশী একবার ফিরিয়া চাহিয়া দর হইতে প্রসারিত দক্ষিণহস্তে তাহার প্রতি নীরবে সান্তুনা প্রেরণ করিয়া বিদীণহন্দয়ে চলিয়া গেল । আবার সেই বহনকালের চিরপরিচিত পরাতন ঘরে স্বামী-স্ত্রীর মিলন হইল । প্রজাপতির নিবন্ধ ! কিন্তু, এ মিলন অধিক দিন পথায়ী হইল না। কারণ, ইহার অনতিকাল পরেই একদিন প্রাতঃকালে গ্রামবাসীগণ সংবাদ পাইল যে, রাত্রে শশী ওলাউঠা রোগে আক্ৰান্ত হইয়া মরিয়াছে এবং রাত্রেই তাহার দাহক্লিয়া সম্পন্ন হইযা গেছে । কেহ এ সম্বন্ধে কোনো কথা বলিল না। কেবল সেই প্রতিবেশিনী তারা মাঝে মাঝে গজন করিয়া উঠিতে চাহিত, সকলে "চুপ চুপ” কবিয়া তাহার মুখ বন্ধ করিয়া দিত। বিদায়কালে শশী ভাইকে কথা দিয়া গিযাছিল, আবার দেখা হইবে । সে কথা কোনখানে রক্ষা হইযাছে জানি না। চৈত্র ১৩০১