পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঠাকুরদা ෆO` এবং বিশেষ আমোদ বোধ করিত। পাড়ার লোকে তাঁহাকে ঠাকুরদামশাই বলিত এবং তাঁহার ওখানে সব দা বিস্তর লোকসমাগম হইত; কিন্তু দৈন্যাবস্থায় পাছে তাঁহার তামাকের খরচটা গরতের হইয়া উঠে এইজন্য প্রায়ই পাড়ার কেহ না কেহ দুই-এক সের তামাক কিনিয়া লইয়া গিয়া তাঁহাকে বলিত, “ঠাকুরদামশায়, একবার পরীক্ষা করিয়া দেখো দেখি, ভালো গয়ার তামাক পাওয়া গেছে ।" ঠাকুরদামশায় দই-এক টান টানিয়া বলিতেন, “বেশ ভাই, বেশ তামাক ” অমনি সেই উপলক্ষ্যে ষাট-পয়ষট্টি টাকা ভরির তামাকের গল্প পাড়িতেন ; এবং জিজ্ঞাসা করিতেন, সে তামাক কাহারও আসবাদ করিয়া দেখিবার ইচ্ছা আছে কি না । সকলেই জানিত যে যদি কেহ ইচ্ছা প্রকাশ করে তবে নিশ্চয় চাবির সন্ধান পাওয়া যাইবে না অথবা অনেক অন্বেষণের পর প্রকাশ পাইবে যে, পরাতন ভূত্য গণেশ বেটা কোথায় যে কী রাখে তাহার আর ঠিকানা নাই— গণেশও বিনা প্রতিবাদে সমস্ত অপবাদ স্বীকার করিয়া লইবে । এইজন্যই সকলেই এক বাক্যে বলিত, “ঠাকুরদমশর, কাজ নেই, সে তামাক আমাদের সহ্য হবে না, আমাদের এই ভালো ।” শনিয়া ঠাকুরদা বিরান্তি না করিয়া ঈষৎ হাস্য করিতেন। সকলে বিদায় লইবার কালে হঠাৎ বলিয়া উঠিতেন, “সে যেন হল, তোমরা কবে আমার এখানে খাবে বলো দেখি, ভাই ।” অমনি সকলে বলিত, “সে একটা দিন ঠিক করে, দেখা যাবে।” ঠাকুরদামশায় বলিতেন, “সেই ভালো, একট ব্যষ্টি পড়কে, ঠান্ড হোক, নইলে এ গরমে গরে ভোজনটা কিছ নয়।” যখন বটি পড়িত তখন ঠাকুরদাকে কেহ তাঁহার প্রতিজ্ঞা স্মরণ করাইয়া দিত না, বরণ কথা উঠিলে সকলে বলিত, “এই বন্টিবাদলটা না ছাড়লে সবিধে হচ্ছে না।” ক্ষুদ্র বাসাবাড়িতে বাস করাটা তাঁহার পক্ষে ভালো দেখাইতেছে না এবং কষ্টও হইতেছে এ কথা তাঁহার বন্ধবোন্ধব তাঁহার সমক্ষে স্বীকার করিত, অথচ কলিকাতায় কিনিবার উপযুক্ত বাড়ি খুজিয়া পাওয়া যে কত কঠিন সে বিষয়েও কাহারও সন্দেহ ছিল না— এমন কি, আজ ছয়-সাত বৎসর সন্ধান করিয়া ভাড়া লইবার মতো একটা বড়ো বাড়ি পাড়ার কেহ দেখিতে পাইল না— অবশেষে ঠাকুরদামশায় বলিতেন, “তা হোক ভাই, তোমাদের কাছাকাছি আছি এই আমার সখে। নয়নজোড়ে বড়ো বাড়ি তো পড়েই আছে, কিন্তু সেখানে কি মন টেকে।” আমার বিশ্বাস, ঠাকুরদাও জানিতেন যে, সকলে তাঁহার অবস্থা জানে এবং যখন তিনি ভূতপবে নয়নজোড়কে বর্তমান বলিয়া ভান করিতেন এবং অন্য সকলেও তাহাতে যোগ দিত তখন মনে মনে বঝিতেন যে, পরপরের এই ছলনা কেবল পরপরের প্রতি সোঁহাদ"বশত । কিন্তু আমার বিষম বিরক্তি বোধ হইত। অলপ বয়সে পরের নিরীহ গবও দমন করিতে ইচ্ছা করে এবং সহস্র গরে্তর অপরাধের তুলনায় নিবন্ধিতাই সবাপেক্ষা অসহ্য বোধ হয়। কৈলাসবাব ঠিক নিবোধ ছিলেন না, কাজে কমে তাঁহার সহায়তা এবং পরামশ সকলেই প্রাথনীয় জ্ঞান করিত। কিন্তু নয়নজোড়ের গৌরবপ্রকাশ সম্বন্ধে তাহার কিছুমার কাণ্ডজ্ঞান ছিল না। সকলে তাঁহাকে জালোবাসিয়া এবং আমোদ ২o