পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

w = মণিহারা 0వ6; বোধ করি লোকটির মনে সন্দেহ হইল, আমি এই পোড়ো বাড়িতে কোনো গপ্ৰেতধনের সন্ধান পাইয়াছি। কিন্তু এ সম্বন্ধে আর কোনো তক তুলিলেন না, কেবল আজ পনেরো বৎসর পবে এই অভিশাপগ্রস্ত বাড়িতে যে ঘটনাটি ঘটিয়াছিল তাহারই বিস্তারিত বর্ণনা করিলেন। লোকটি এখানকার ইস্কুলমাস্টার। তাঁহার ক্ষুধা ও রোগ-শীর্ণ মুখে মস্ত একটা টাকের নীচে একজোড়া বড়োবড়ো চক্ষ আপন কোটরের ভিতর হইতে অস্বাভাবিক উজৰলতায় জনলিতেছিল। তাঁহাকে দেখিয়া ইংরাজ কবি কোলরিজের সস্ট প্রাচীন নাবিকের কথা আমার মনে পড়িল । মাঝি নমাজ পড়া সমাধা করিয়া রন্ধনকাযে মন দিয়াছে। সন্ধ্যার শেষ আভাটকুে মিলাইয়া আসিয়া ঘাটের উপরকার জনশন্য অন্ধকার বাড়ি আপন পবোবস্থার প্রকাণ্ড প্রেতমতির মতো নিস্তদ্ধ দাঁড়াইয়া রহিল। ইস্কুলমাস্টার কহিলেন— আমি এই গ্রামে আসার প্রায় দশ বৎসর পতবে এই বাড়িতে ফণিভূষণ সাহা বাস করিতেন । তিনি তাঁহার অপরকে পিতৃব্য দরগামোহন সাহার বৃহৎ বিষয় এবং ব্যবসায়ের উত্তবাধিকারী হইয়াছিলেন । কিন্তু তাঁহাকে একালে ধরিয়াছিল। তিনি লেখাপড়া শিখিয়াছিলেন। তিনি জ্ঞতাসমেত সাহেবের আপিসে ঢকিয় সম্পণে খাঁটি ইংরাজি বলিতেন। তাহাতে আবার দাড়ি রাখিয়াছিলেন, সতরাং সাহেব-সওদাগরের নিকট তাঁহার উন্নতির সম্ভাবনামাত্র ছিল না। তাঁহাকে দেখিবামারই নব্যবঙ্গ বলিয়া ঠাহর হইত। আবার ঘরের মধ্যেও এক উপসর্গ জটিয়াছিল। তাঁহার স্ত্রীটি ছিলেন সন্দেরী। একে কলেজে-পড়া তাহতে সন্দেরী সতী, সতরাং সেকালের চালচলন আর রহিল না। এমনকি, ব্যামো হইলে অ্যাসিস্টাস্ট-সাজনকে ডাকা হইত। অশন বসন ভূষণও এই পরিমাণে বাড়িয়া উঠিতে লাগিল । মহাশয় নিশ্চয়ই বিবাহিত, অতএব এ কথা আপনাকে বলাই বাহুল্য যে, সাধারণত সত্ৰীজাতি কাঁচা আম, ঝাল লঙ্কা এবং কড়া লামাই ভালোবাসে । যে দভোগ্য পরষ নিজের সীর ভালোবাসা হইতে বঞ্চিত সে-যে কুশ্রী অথবা নিধন তাহা নহে, সে নিতান্ত নিরীহ । যদি জিজ্ঞাসা করেন কেন এমন হইল, আমি এ সম্বন্ধে অনেক কথা ভাবিয়া বাখিয়াছি। যাহার যা প্রবত্তি এবং ক্ষমতা সেটার চর্চা না করিলে সে সখী হয় না। শিঙে শনি দিবার জন্য হরিণ শক্ত গাছের গড়ি খোঁজে, কলাগাছে তাহার শিং ঘষিবার সুখ হয় না। নরনারীর ভেদ হইয়া অবধি সীলোক দুরন্ত পর্ষকে নানা কৌশলে ভুলাইয়া বশ করিবার বিদ্যা চচা কবিয়া আসিতেছে। যে স্বামী আপনি বশ হইয়া বসিয়া থাকে তাহার পল্লী-বেচারা একেবারেই বেকার, সে তাহার মাতামহীদের নিকট হইতে শতলক্ষ বৎসরের শান-দেওয়া ষে উজ্জল বরশাসক, অগ্নিবাণ ও নাগপাশবন্ধনগুলি পাইয়াছিল তাহা সমস্ত নিম্ফল হইয়া যায়। স্মীলোক পর্যকে ভূলাইয়া নিজের শক্তিতে ভালোবাসা আদায় করিয়া লইতে