পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ぬS গল্পগুচ্ছ চায়, স্বামী যদি ভালোমানুষ হইয়া সে অবসরটুকু না দেয় তবে স্বামীর অদষ্ট মন্দ এবং সত্রীরও ততোধিক। নবসভ্যতার শিক্ষামৰ্ম্মে পরিষে আপন স্বভাবসিন্ধ বিধাতাদত্ত সমহৎ ববরতা হারাইয়া আধুনিক দাম্পত্যসম্বন্ধটাকে এমন শিথিল করিয়া ফেলিয়াছে। অভাগা ফণিভূষণ আধুনিক সভ্যতার কল হইতে অত্যন্ত ভালেমানষেটি হইয়া বাহির হইয়া আসিয়াছিল— ব্যবসায়েও সে সুবিধা করিতে পারিল না, দাপত্যেও তাহার তেমন সযোগ ঘটে নাই। ফণিভূষণের সত্ৰী মণিমালিকা বিনা চেষ্টায় আদর, বিনা অশ্রদ্বষণে ঢাকাই শাড়ি এবং বিনা দ্যজয় মানে বাজবন্ধ লাভ করিত। এইরপে তাহার নারীপ্রকৃতি এবং সেইসঙ্গে তাহার ভালোবাসা নিশ্চেন্ট হইয়া গিয়াছিল। সে কেবল গ্রহণ করিত, কিছর দিত না । তাহার নিরীহ এবং নিবোধ স্বামীটি মনে করিত, দানই বুঝি প্রতিদান পাইবার উপায়। একেবারে উলটা বঝিয়াছিল আর কি। ইহার ফল হইল এই যে, স্বামীকে সে আপন ঢাকাই শাড়ি এবং বাজবন্ধ জোগাইবার যন্ত্রস্বরুপ জ্ঞান করিত ; যন্ত্রটিও এমন সচারন যে, কোনোদিন তাহার চাকায় এক ফোঁটা তেল জোগাইবারও দরকার হয় নাই । ফণিভূষণের জন্মস্থান ফলবেড়ে, বাণিজ্যস্থান এখানে। কমান রোধে এইখানেই তাহাকে অধিকাংশ সময় থাকিতে হইত। ফলবেড়ের বাড়িতে তাহার মা ছিল না, তব পিসি মাসি ও অন্য পাঁচজন ছিল। কিন্তু ফণিভূষণ পিসি মাসি ও অন্য পাঁচজনের উপকারাথেই বিশেষ করিয়া সন্দেরী সত্ৰী ঘরে আনে নাই। সুতরাং সীকে সে পাঁচজনের কাছ থেকে আনিয়া এই কুঠিতে একলা নিজের কাছেই রাখিল। কিন্তু অন্যান্য অধিকার হইতে সত্রী-অধিকারের প্রভেদ এই যে, সতীকে পাঁচজনের কাছ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া একলা নিজের কাছে রাখিলেই যে সব সময় বেশি করিয়া পাওয়া ষায় তাহা নহে । সত্ৰীটি বেশি কথাবাত কহিত না, পাড়াপ্রতিবেশিনীদের সঙ্গেও তাহার মেলামেশা বেশি ছিল না; ব্রত উপলক্ষ করিয়া দটো ব্ৰাহরণকে খাওয়ানো, বা বৈষ্ণবীকে দটো পয়সা ভিক্ষা দেওয়া কখনও তাহার বারা ঘটে নাই। তাহার হাতে কোনো জিনিস নষ্ট হয় নাই: কেবল স্বামীর আদরগলো ছাড়া আর যাহা পাইয়াছে সমস্তই জমা করিয়া রাখিয়াছে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, সে নিজের অপরপ যৌবনতী হইতেও যেন লেশমাত্র অপব্যয় ঘটিতে দেয় নাই। লোকে বলে, তাহার চব্বিশ বৎসর বয়সের সময়ও তাহাকে চোদ্দ বৎসরের মতো কাঁচা দেখিতে ছিল। যাহাদের হাংপিণ্ড বরফের পিণ্ড, যাহাদের বকের মধ্যে ভালোবাসার জালাযন্ত্রণা পথান পায় না, তাহারা বোধ করি রাখিতে পারে। ঘনপল্লবিত অতিসতেজ লতার মতো বিধাতা মলিমালিকাকে নিজফলা করিয়া রাখিলেন, তাহাকে সন্তান হইতে বঞ্চিত করিলেন। অর্থাৎ তাহাকে এমন একটা কিছ দিলেন না যাহাকে সে আপন লোহার সিন্দকের মণিমাণিকা অপেক্ষা বেশি করিয়া বঝিতে পারে, যাহা বসন্তপ্রভাতের নবসায্যের মতো আপন কোমল উত্তাপে তাহার হদয়ের বরফপিণ্ডটা গলাইয়া সংসারের উপর একটা নেহনিকার বহাইরা দেয়।