পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○bf গল্পগুচ্ছ করিলেন, অকস্মাৎ রসভঙ্গ হইয়া লোকটা সেইখানে ধপ করিয়া বসিয়া পড়িল। কান্তি পনরায় কামরায় আসিয়া বন্দক সাফ করিতে লাগিলেন। সেইদিন বেলা প্রহর-তিনেকের সময় গ্রামপথের ঘনচ্ছায়ার মধ্য দিয়া শিকারীর দল শস্যক্ষেত্রের দিকে চলিয়াছিল। তাহাদের মধ্যে একজন বন্দকের আওয়াজ করিয়া দিল। কিছু দরে বাঁশঝাড়ের উপর হইতে কী-একটা পাখি আহত হইয়া ঘুরিতে ঘরিতে ভিতরের দিকে পড়িয়া গেল। কৌতুহলী কান্তিচন্দ্র পাখির সন্ধানে ঝোপঝাড় ভেদ করিয়া ভিতরে গিয়া দেখিলেন, একটি সচ্ছল গহস্থঘর, প্রাঙ্গণে সারি সারি ধানের গোলা। পরিচ্ছন্ন বহৎ গোয়ালঘরের কুলগাছতলায় বসিয়া সকালবেলাকার সেই মেয়েটি একটি আহত ঘাঘ বকের কাছে তুলিয়া উচ্ছসিত হইয়া কাঁদিতেছে এবং গামলার জলে অঞ্চল ভিজাইয়া পাখির চটপটের মধ্যে জল নিংড়াইয়া দিতেছে। পোষা বিড়ালটা তাহার কোলের উপর দই পা তুলিয়া উধৰমখে ঘাঘটির প্রতি উৎসকে দষ্টিপাত করিতেছে; বালিকা মধ্যে মধ্যে তাহার নাসিকাগ্রভাগে তজনী-আঘাত করিয়া লাখ জন্তুর অতিরিক্ত আগ্রহ দমন করিয়া দিতেছে । পল্লীর নিস্তব্ধ মধ্যাহ্নে একটি গহপথপ্রাঙ্গণের সচ্ছল শান্তির মধ্যে এই কর্ণচ্ছবি এক মহেতেই কান্তিচন্দ্রের হৃদয়ের মধ্যে অাঁকা হইয়া গেল। বিরলপল্লব গাছটির ছায়া ও রৌদ্র বালিকার ক্লোড়ের উপর আসিয়া পড়িয়াছে ; আদরে আহারপরিতৃপ্ত পরিপষ্ট গাভী আলস্যে মাটিতে বসিয়া শঙ্গ ও পচ্ছে -আন্দোলনে পিঠের মাছি তাড়াইতেছে; মাঝে মাঝে বাঁশের ঝাড়ে ফিস ফিস কথার মতো নতন উত্তরবাতাসে খস খস শব্দ উঠিতেছে। সেদিন প্রভাতে নদীতীরে বনের মধ্যে যাহাকে বনশ্রীর মতো দেখিতে হইয়াছিল, আজ মধ্যাহ্নে নিস্তব্ধ গোষ্ঠপ্রাঙ্গণচ্ছায়ায় তাহাকে স্নেহবিগলিত গহলক্ষীটির মতো দেখিতে হইল। কান্তিচন্দ্র বন্দকে-হতে হঠাৎ এই ব্যথিত বালিকার সম্মখে আসিয়া অত্যন্ত কুণ্ঠিত হইয়া পড়িলেন। মনে হইল, যেন কমালসদ্ধ চোর ধরা পড়িলাম। পাখিটি যে আমার গলিতে আহত হয় নাই কোনোপ্রকারে এই কৈফিয়তটুকু দিতে ইচ্ছা হইল। কেমন করিয়া কথাটা পাড়িবেন ভাবিতেছেন, এমনসময়ে কুটির হইতে কে ডাকিল, “সন্ধা।” বালিকা যেন চমকিত হইয়া উঠিল। আবার ডাক পড়িল, “সন্ধা।” তখন সে তাড়াতাড়ি পাখিটি লইয়া কুটিরমুখে চলিয়া গেল। কান্তিচন্দ্র ভাবিলেন, নামটি উপযুক্ত বটে। সন্ধা! কান্তি তখন দলের লোকের হাতে বন্দকে রাখিয়া সদর পথ দিয়া সেই কুটিরের বারে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। দেখিলেন, একটি প্রৌঢ়বয়স্ক মণ্ডিতমখ শাতমতি ব্ৰাহয়ণ দাওয়ায় বসিয়া হরিভক্তিবিলাস পাঠ করিতেছেন। ভক্তিমণ্ডিত তাঁহার মখের সগভীর স্নিগ্ধ প্রশান্ত ভাবেব সহিত কান্তিচন্দ্র সেই বালিকার দয়ার্দ্র মাখের সাদশ্য অনুভব করিলেন। কান্তি তাঁহাকে নমস্কার করিয়া কহিলেন, “তৃকা পাইয়াছে ঠাকুর, এক ঘটি জল পাইতে পারি কি।” ব্লাহরণ তাড়াতাড়ি তাঁহাকে অভ্যর্থনা করিয়া বসাইলেন এবং ভিতর হইতে পিতলের রেকাবিতে কয়েকটি বাতাসা ও কাসার ঘটিতে জল লইয়া বহস্তে অতিথির