গল্পগুচ্ছ 6 O(k মাল্যদান সকালবেলায় শাঁত-শাঁত ছিল। দুপারবেলায় বাতাসটি অল্প একট তাতিয়া উঠিয়া দক্ষিণ দিক হইতে বহিতে আরম্ভ করিয়াছে। যতীন বে বারান্দায় বসিয়া ছিল সেখান হইতে বাগানের এক কোলে এক দিকে একটি কাঁঠাল ও আর-এক দিকে একটি শিরীষগাছের মাঝখানের ফাঁক দিয়া বাহিরের মাঠ চোখে পড়ে। সেই শান্য মাঠ ফালগানের রৌদ্রে ধধে করিতেছিল। তাহারই এক প্রান্ত দিয়া কাঁচা পথ চলিয়া গেছে—সেই পথ বাহিয়া বোঝাই-খালাস গোরুর গাড়ি মন্দগমনে গ্রামের দিকে ফিরিয়া চলিয়াছে, গাড়োয়ান মাথায় গামছা ফেলিয়া অত্যন্ত বেকারভাবে গান গাহিতেছে। এমনসময় পশ্চাতে একটি সহাস্য নারীকণ্ঠ বলিয়া উঠিল, “কণী যতীন, পাবজন্মের কারও কথা ভাবিতেছ বুঝি।” যতীন কহিল, “কেন পটল, আমি এমনিই কি হতভাগা যে, ভাবিতে হইলেই পবজন্ম লইয়া টান পাড়িতে হয় ।” আত্মীয়সমাজে ‘পটল নামে খ্যাত এই মেয়েটি বলিয়া উঠিল, “আর মিথ্যা বড়াই করিতে হইবে না। তোমার ইহজন্মের সব খবরই তো রাখি, মশায়। ছি ছি, এত বয়স হইল তব একটা সামান্য বউও ঘরে আনিতে পারিলে না। আমাদের ঐ-যে ধনা মালাঁটা, ওরও একটা বউ আছে— তার সঙ্গে দই বেলা ঝগড়া করিয়া সে পাড়াসদ্ধে লোককে জানাইয়া দেয় যে, বউ আছে বটে। আর তুমি যে মাঠের দিকে তাকাইয়া ভান করিতেছ, যেন কার চাদমুখ ধ্যন করিতে বসিয়াছ, এ-সমস্ত চালাকি আমি কি বাকি না— ও কেবল লোক দেখাইবার ভড়ং মাত্র। দেখো যতীন, চেনা বামনের পৈতের দরকার হয় না। আমাদের ঐ ধনাটা তো কোনোদিন বিরহের ছয়তা করিয়া মাঠের দিকে আমন তাকাইয়া থাকে না ; অতিবড়ো বিচ্ছেদের দিনেও গাছের তলায় নিড়ানি হাতে উহাকে দিন কাটাইতে দেখিয়াছি, কিন্তু উহার চোখে তো অমন ঘোর-ঘোর ভাব দেখি নাই । আর তুমি, মশায়, সাত জন্ম বউয়ের মুখ দেখিলে না— কেবল হাসপাতালে মড়া কাটিয়া ও পড়া মুখস্থ করিয়া বয়স পার করিয়া দিলে, তুমি অমনতরো দােপরেবেলা আকাশের দিকে গদগদ হইয়া তাকাইয়া থাক কেন। না, এ-সমস্ত বাজে চালাকি আমার ভালো লাগে না । আমার গা জবালা করে।" যতীন হাতজোড় করিয়া কহিল, “থাক, থাক, আর নয়। আমাকে আর লজ্জা দিয়ো না । তোমাদের ধনাই ধন্য। উহারই আদশে আমি চলিতে চেষ্টা করিব। আর কথা নয় কাল সকালে উঠিয়াই যে কাঠকুড়ানি মেয়ের মাখ দেখিব তাহারই গলায় মালা দিব—ধিককার আমার আর সহ্য হইতেছে না।” পটল । তবে এই কথা রহিল ? थङौन । झाँ, ब्रश्लि । পটল । তবে এসো। যতীন। কোথায় যাইব । পটল। এসোই-না।
