পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

← ᏬᏑ গল্পগুচ্ছ বাঁধা দিয়ে তো দেনা শোধ হবে না ! সকুমারী। যার সামথ কম তার অত লবা চালেই বা দরকার কী। শশধর। মন্মথ তো সেই কথাই বলত। আমরাই তো সতীশকে অন্যরাপ বুঝিয়েছিলেম। এখন ওকে দোষ দিই কী করে। সকুমারী। না— দোষ কি ওর হতে পারে। সব দোষ আমারই। তুমি তো আর কারও কোনো দোষ দেখতে পাও না— কেবল আমার বেলাতেই তোমার দশনশক্তি বেড়ে যায় । শশধর । ওগো, রাগ কর কেন— আমিও তো দোষী। সকুমারী। তা হতে পারে। তোমার কথা তুমি জান। কিন্তু, আমি কখনো ওকে এমন কথা বলি নি যে, তুমি তোমার মেসোর ঘরে পায়ের উপর পা দিয়ে গোঁফে তা দাও, আর লম্বা কেদারায় বসে বসে আমার বাছার উপর বিষদটি দিতে থাকো। শশধর। না, ঠিক ঐ কথাগুলো তুমি তাকে মাথার দিব্য দিয়ে শপথ করিয়ে নাও নি— অতএব তোমাকে দোষ দিতে পারি নে। এখন কী করতে হবে বলো । সকুমারী। সে তুমি যা ভালো বোধ কর তাই করো। কিন্তু, আমি বলছি, সতীশ যতক্ষণ এ বাড়িতে থাকবে, আমি খোকাকে কোনোমতে বাইরে যেতে দিতে পারব না। ডাক্তার খোকাকে হাওয়া খাওয়াতে বিশেষ করে বলে দিয়েছে— কিন্তু হাওয়া খেতে গিয়ে ও কখন একলা সতীশের নজরে পড়বে, সে কথা মনে করলে আমার মন সিথর থাকে না। ও তো আমারই আপন বোনের ছেলে, কিন্তু আমি ওকে এক মহত্যের জন্যও বিশ্ববাস করি নে—এ আমি তোমাকে স্পষ্টই বললেম । সতীশের প্রবেশ সতীশ । কাকে বিশ্বাস কর না, মাসিমা । আমাকে ? আমি তোমার খোকাকে সযোগ পেলে গলা টিপে মারব, এই তোমার ভয় ? যদি মারি, তবে তুমি তোমার বোনের ছেলের যে অনিষ্ট করেছ তার চেয়ে ওর কি বেশি অনিষ্ট করা হবে । কে আমাকে ছেলেবেলা হতে নবাবের মতো শৌখিন করে তুলেছে এবং আজ ভিক্ষকের মতো পথে বের করলে। কে আমাকে পিতার শাসন হতে কেড়ে এনে বিশ্বের লাঞ্ছনার মধ্যে টেনে আনলে। কে আমাকে— সকুমারী। ওগো, শনছ ? তোমার সামনে আমাকে এমনি করে অপমান করে ! নিজের মুখে বললে কিনা খোকাকে গলা টিপে মারবে ! ওমা, কী হবে গো । আমি কালসাপকে নিজের হাতে দধকলা দিয়ে পুষেছি। সতীশ । দধকলা আমারও ঘরে ছিল—সে দধকলায় আমার রক্ত বিষ হয়ে উঠত না— তা হতে চিরকালের মতো বঞ্চিত করে তুমি যে দধকলা আমাকে খাইয়েছ তাতে আমার বিষ জমে উঠেছে। সত্য কথাই বলছ, এখন আমাকে ভয় করাই চাই— এখন আমি দংশন করতে পারি। বিধমুখীর প্রবেশ বিধ। কী সতীশ, কী হয়েছে, তোকে দেখে যে ভয় হয়। অমন করে তাকিয়ে আছিস কেন। আমাকে চিনতে পারছিস নে ? আমি যে তোর মা, সতীশ ! সতীশ । মা, তোমাকে মা বলব কোন মখে। মা হয়ে কেন তুমি আমার পিতার শাসন হতে আমাকে বঞ্চিত করলে। কেন তুমি আমাকে জেল হতে ফিরিয়ে আনলে ।