পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাস্টারমশায় 6. ෂද් উপযন্ত ছেলে বেণর ভাগ্যে জটিল না। কাজেই হরলাল তাহার একমাত্র সঙ্গী হইয়া উঠিল। অনকেল অবস্থায় বেণর যে-সকল দৌরাত্ম্য দশ জনের মধ্যে ভাগ হইয়া একরকম সহনযোগ্য হইতে পারিত তাহা সমস্তই একা হরলালকে বহিতে হইত। এইসমস্ত উপদ্রব প্রতিদিন সহ্য করিতে করিতে হরলালের স্নেহ আরও দৃঢ় হইয়া উঠিতে লাগিল। রতিকাত বলিতে লাগিল, “আমাদের সোনাবাবকে মাস্টারমশায় মাটি করিতে বসিয়াছেন।” অধরলালেরও মাঝে মাঝে মনে হইতে লাগিল, মাস্টারের সঙ্গে ছাত্রের সম্মবন্ধটি ঠিক যেন যথোচিত হইতেছে না। কিন্তু হরলালকে বেপরে কাছ হইতে তফাত করে এমন সাধ্য এখন কাহার আছে । বেণর বয়স এখন এগারো। হরলাল এফ-এ পাস করিয়া জলপানি পাইয়া তৃতীয় বাষিকে পড়িতেছে । ইতিমধ্যে কলেজে তাহার দটি-একটি বন্ধ যে জোটে নাই তাহা নহে, কিন্তু ওই এগারো বছরের ছেলেটিই তাহার সকল বন্ধর সেরা। কলেজ হইতে ফিরিয়া বেণকে লইয়া সে গোলদিঘি এবং কোনো-কোনোদিন ইডেন গাডেনে বেড়াইতে যাইত। তাহাকে গ্রীক ইতিহাসের বীরপরষদের কাহিনী বলিত, তাহাকে স্কট ও ভিক্টর হাগোর গল্প একটু একটা করিয়া বাংলায় শনাইত— উচ্চৈঃস্বরে তাহার কাছে ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি করিয়া তাহা তজমা করিয়া ব্যাখ্যা করিত, তাহার কাছে শেকসপিয়ারের 'জলিয়স সাঁজার মানে করিয়া পড়িয়া তাহা হইতে অ্যাপ্টনির বস্তৃতা মুখস্থ করাইবার চেষ্টা করিত। ওই একটুখানি বালক হরলালের হৃদয়উদবোধনের পক্ষে যেন সোনার কাঠির মতো হইয়া উঠিল । একলা বসিয়া যখন পড়া মুখপথ করিত তখন ইংরেজি সাহিত্য সে এমন করিয়া মনের মধ্যে গ্রহণ করে নাই, এখন সে ইতিহাস বিজ্ঞান সাহিত্য যাহা-কিছু পড়ে তাহার মধ্যে কিছু রস পাইলেই সেটা আগে বেণকে দিবার জন্য আগ্রহ বোধ করে এবং বেণর মনে সেই আনন্দ সন্টার করিবার চেষ্টাতেই তাহার নিজের বুঝিবার শক্তি ও আনন্দের অধিকার যেন দইগণ বাড়িয়া যায় । বেণ ইস্কুল হইতে আসিয়াই কোনোমতে তাড়াতাড়ি জলপান সারিয়াই হরলালের কাছে যাইবার জন্য একেবারে বাস্ত হইয়া উঠিত, তাহার মা তাহাকে কোনো ছাতায় কোনো প্রলোভনে অন্তঃপরে ধরিয়া রাখতে পারিত না। ননীবালার ইহা ভালো লাগে নাই। তাহার মনে হইত, হরলাল নিজের চাকরি বজায় রাখিবার জন্যই ছেলেকে এত করিয়া বশ করিবার চেষ্টা করিতেছে। সে একদিন হরলালকে ডাকিয়া পদার আড়াল হইতে বলিল, “তুমি মাস্টার, ছেলেকে কেবল সকালে এক ঘণ্টা, বিকালে এক ঘণ্টা পড়াইবে— দিনরাত্রি উহার সঙ্গে লাগিয়া থাক কেন। আজকাল ও যে মা বাপ কাহাকেও মানে না। ও কেমন শিক্ষা পাইতেছে । আগে যে ছেলে মা বলিতে একেবারে নাচিয়া উঠিত আজ যে তাহাকে ডাকিয়া পাওয়া যায় না। বেশ আমার বড়ো ঘরের ছেলে, উহার সঙ্গে তোমার আত মাখামাখি কিসের জন্য।” সেদিন রতিকাত অধরবাবার কাছে গল্প করিতেছিল যে, তাহার জানা তিনচারজন লোক, বড়োমানষের ছেলের মাস্টারি করিতে আসিয়া ছেলের মন এমন করিয়া ළුණූ