পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

や8ミ গল্পগুচ্ছ বিবেষদৃষ্টি ছেলেটির অমঙ্গল ঘটায়। তাহার দেবর বাঁচিয়া নাই, কিরণের সন্তানসম্ভাবনা আছে বলিয়া কেহই আশা করে না, অতএব এই শিশুটিকে কোনোমতে সকলপ্রকার অকল্যাণ হইতে বাঁচাইয়া রাখিতে পারিলে তবে রক্ষা। এইরপে বংশীর ছেলেটিকে যত্ন করিবার পথ বনোয়ারির পক্ষে বেশ স্বাভাবিক হইল না। বাড়ির সকলের আদরে ক্ৰমে ছেলেটি বড়ো হইয়া উঠিতে লাগিল। তাহার নাম হইল হরিদাস । এত বেশি আদরের আওতায় সে যেন কেমন ক্ষীণ এবং ক্ষণভঙ্গর আকার ধারণ করিল। তাগা-তাবিজ-মাদলিতে তাহার সবাঙ্গ আচ্ছন্ন, রক্ষকের দল সবাদাই তাহাকে ঘিরিয়া। ইহার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে বনোয়ারির সঙ্গে তাহার দেখা হয় । জ্যাঠামশায়ের ঘোড়ায় চড়িবার চাবক লইয়া আস্ফালন করিতে সে বড়ো ভালোবাসে। দেখা হইলেই বলে চাব । বনোয়ারি ঘর হইতে চাবকে বাহির করিয়া আনিয়া বাতাসে সাঁই সাঁই শব্দ করিতে থাকে, তাহার ভারি আনন্দ হয়। বনোয়ারি এক-একদিন তাহাকে আপনার ঘোড়ার উপর বসাইয়া দেয়, তাহাতে বাড়িসন্ধ লোক একেবারে হাঁ-হাঁ করিয়া ছটিয়া আসে। বনোয়ারি কখনো কখনো আপনার বন্দকে লইয়া তাহার সঙ্গে খেলা করে, দেখিতে পাইলে কিরণ ছটিয়া আসিয়া বালককে সরাইয়া লইয়া যায়। কিন্তু, এই-সকল নিষিদ্ধ আমোদেই হরিদাসের সকলের চেয়ে অনুবাগ । এইজন্য সকলপ্রকার বিঘা-সত্ত্বে জ্যাঠামশায়ের সঙ্গে তাহার খুব ভাব হইল । বহুকাল অব্যাহতির পর এক সময়ে হঠাৎ এই পবিবারে মৃত্যুর আনাগোনা ঘটিল। প্রথমে মনোহরের সত্রীর মৃত্যু হইল। তাহার পরে নীলকন্ঠ যখন কতার জন্য বিবাহের পরামর্শ ও পাত্রীর সন্ধান করিতেছে এমন সময় বিবাহের লনের পরেই মনোহরের মৃত্যু হইল। তখন হরিদাসের বয়স আট। মৃত্যুর পতবে মনোহর বিশেষ করিয়া তাঁহার ক্ষুদ্র এই বংশধরকে কিরণ এবং নীলকঠের হাতে সমপণ কী ম: গেলেন ; বনোয়ারিকে কোনো কথাই বলিলেন না। বাক্স হইতে উইল যখন বাহির হইল তখন দেখা গেল, মনোহর তাঁহার সমস্ত সম্পত্তি হরিদাসকে দিয়া গিয়াছেন। বনোয়ারি যাবজ্জীবন দুই শত টাকা করিয়া মাসোহারা পাইবেন । নীলকন্ঠ উইলের একজিকুটির; তাহার উপরে ভার রহিল, সে যতদিন বাঁচে, হালদার-পরিবারের বিষয় এবং সংসারের ব্যবস্থা সেই করিবে । বনোয়ারি বুঝিলেন, এ পরিবারে কেহ তাঁহাকে ছেলে দিয়াও ভরসা পায় না, বিষয় দিয়াও না। তিনি কিছুই পারেন না, সমস্তই নষ্ট করিয়া দেন, এ সম্পবন্ধে এ বাড়িতে কাহারও দুই মত নাই। অতএব, তিনি বরাদমতো আহার করিয়া কোণের ঘরে নিদ্রা দিবেন, তাঁহার পক্ষে এইরুপ বিধান। তিনি কিরণকে বলিলেন, “আমি নীলকণ্ঠের পেনসন খাইয়া বাঁচব না। এ বাড়ি ছাড়িয়া চলো আমার সঙ্গে কলিকাতায় ।” “ওমা! সে কী কথা। এ তো তোমারই বাপের বিষয়, আর হরিদাস তো তোমারই আপন ছেলের তুল্য। ওকে বিষয় লিখিয়া দেওয়া হইয়াছে বলিয়া তুমি রাগ কর কেন ।” হার হায়, তাহার স্বামীর হদয় কী কঠিন। এই কচি ছেলের উপরেও ঈষা করিতে তাহার মন ওঠে। তাহার বশর যে উইলটি লিখিয়াছে কিরণ মনে মনে