পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՆԳ 8 গল্পগুচ্ছ গায়ে নদীমার ধারে কোনো গতিকে একটা গাবগাছ জন্মেছে । যেদিন দেখতুম সেই গাবের গাছের নতুন পাতাগুলি রাঙা টকটকে হয়ে উঠেছে, সেইদিন জানতুম, ধরাতলে বসন্ত এসেছে বটে। আমার ঘরকন্নার মধ্যে ঐ অনাদত মেয়েটার চিত্ত যেদিন আগাগোড়া এমন রঙিন হয়ে উঠল সেদিন আমি বুঝলাম, হৃদয়ের জগতেও একটা বসন্তের হাওয়া আছে—সে কোন সবগ থেকে আসে, গলির মোড় থেকে আসে না। বিন্দর ভালোবাসার দুঃসহ বেগে আমাকে অস্থির করে তুলেছিল। এক-একবার তার উপর রাগ হত সে কথা স্বীকার করি, কিন্তু তার এই ভালোবাসার ভিতর দিয়ে আমি আপনার একটি স্বরপে দেখলাম ষা আমি জীবনে আর কোনোদিন দেখি নি। সেই আমার মন্ত স্বরুপ। এ দিকে, বিন্দর মতো মেয়েকে আমি যে এতটা আদরযত্ন করছি এ তোমাদের অত্যন্ত বাড়াবাড়ি বলে ঠেকল। এর জন্যে খ:ংখ:ং-খিটখিটের অন্ত ছিল না। যেদিন আমার ঘর থেকে বাজবন্ধ চুরি গেল সেদিন, সেই চুরিতে বিন্দর যে কোনো রকমের হাত ছিল এ কথার আভাস দিতে তোমাদের লক্ষজা হল না । যখন স্বদেশী হাঙ্গামায লোকের বাড়ি-তল্লাসি হতে লাগল তখন তোমরা অনায়াসে সন্দেহ করে বসলে যে, বিন্দ পলিসের পোষা মেয়ে-চর। তার আর-কোনো প্রমাণ ছিল না , কেবল এই প্রমাণ যে, ও বিন্দ। তোমাদের বাড়ির দাসীরা ওর কোনোরকম কাজ করতে আপত্তি করত – তাদের কাউকে ওর কাজ করবার ফরমাশ করলে, ও মেয়েও একেবারে সংকোচে যেন আড়স্ট হয়ে উঠত। এই-সকল কারণেই ওর জন্যে আমার খরচ বেড়ে গেল । আমি বিশেষ করে একজন আলাদা দাসী রাখলাম। সেটা তোমাদের ভালো লাগে নি। বিন্দকে আমি যে-সব কাপড় পরতে দিতুম তা দেখে তুমি এত রাগ করেছিলে যে, আমার হাত-খরচের টাকা বন্ধ করে দিলে। তার পরদিন থেকে আমি পাঁচ-সিকে দ মর জোড়া মোটা কোরা কলের ধতি পরতে আরম্ভ করে দিলাম। আর, মতির মা যখন আমার এটো ভাতের থালা নিয়ে যেতে এল তাকে বারণ করে দিলাম। আমি নিজে উঠোনের কলতলায় গিয়ে এটো ভাত বাছরকে খাইয়ে বাসন মেজেছি। একদিন হঠাৎ সেই দশ্যটি দেখে তুমি খুব খুশি হও নি। আমাকে খুশি না করলেও চলে আর তোমাদের খুশি না করলেই নয়, এই সবন্ধিটা আজ পর্যন্ত আমার ঘটে ७0aा ना । এ দিকে তোমাদের রাগও যেমন বেড়ে উঠেছে বিন্দর বয়সও তেমনি বেড়ে চলেছে। সেই সবাভাবিক ব্যাপারে তোমরা অস্বাভাবিক রকমে বিরত হয়ে উঠেছিলে । একটা কথা মনে করে আমি আশ্চয’ হই, তোমরা জোর করে কেন বিন্দকে তোমাদের বাড়ি থেকে বিদায় করে দাও নি। আমি বেশ বুঝি, তোমরা আমাকে মনে মনে ভয় কর। বিধাতা যে আমাকে বধি দিয়েছিলেন, ভিতরে ভিতরে তার খাতির না করে তোমরা বচি না। অবশেষে বিন্দকে নিজের শক্তিতে বিদায় করতে না পেরে তোমরা প্রজাপতিদেবতার শরণাপন্ন হলে। বিন্দর বর ঠিক হল। বড়ো জা বললেন, “বাঁচলম। মা কালী আমাদের বংশের মুখ রক্ষা করলেন।” বর কেমন তা জানি নে; তোমাদের কাছে শুনলাম, সকল বিষয়েই ভালো। বিন্দ