পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

વેવo গল্পগুচ্ছ ভাণ্ডারের জন্যে প্রাণের তেজ, প্রাণের রস, প্রাণের লাবণ্য সঞ্চয় করে; আর উৎকণ্ঠিত প্রাণের বাণীকে অহনিশি আকাশে উচ্ছসিত করে তোলে, “আমি থাকব।' সেই বিশ্বপ্রাণের বাণী কেমন-এক-রকম করে আপনার রক্তের মধ্যে শনতে পেয়েছিল ঐ বলাই। আমরা তাই নিয়ে খাব হেসেছিলাম । একদিন সকালে একমনে খবরের কাগজ পড়ছি, বলাই আমাকে ব্যস্ত করে ধরে নিয়ে গেল বাগানে। এক জায়গায় একটা চারা দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলে, “কাকা, এ গাছটা কী।” দেখলাম একটা শিমলগাছের চারা বাগানের খোওয়া-দেওয়া রাস্তার মাঝখানেই উঠেছে। হার রে, বলাই ভুল করেছিল আমাকে ডেকে নিয়ে এসে । এতটুকু যখন এর অঙ্কুর বেরিয়েছিল, শিশর প্রথম প্রলাপটকুর মতো, তখনই এটা বলাইয়ের চোখে পড়েছে। তার পর থেকে বলাই প্রতিদিন নিজের হাতে একটা একটা জল দিয়েছে, সকালে বিকেলে ক্ৰমাগতই ব্যগ্র হয়ে দেখেছে কতটুকু বাড়ল। শিমুলগাছ বাড়েও দ্রুত, কিন্তু বলাইয়ের আগ্রহের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না। যখন হাত দুয়েক উচু হয়েছে তখন ওর পত্রসমাধি দেখে ভাবলে এ একটা আশচষ গাছ, শিশর প্রথম বন্ধির আভাস দেখবা মাত্র মা যেমন মনে করে— আশচয শিশ। বলাই ভাবলে, আমাকেও চমৎকৃত করে দেবে। আমি বললাম, "মালীকে বলতে হবে, এটা উপড়ে ফেলে দেবে।" বলাই চমকে উঠল। এ কী দারুণ কথা । বললে, “না, কাকা, তোমার দুটি পাবে পড়ি, উপড়ে ফেলো না।” আমি বললাম, "কী যে বলিস তার ঠিক নেই। একেবারে রাস্তার মাঝখানে উঠেছে। বড়ো হলে চার দিকে তুলো ছড়িয়ে অস্থির করে দেবে।” আমার সঙ্গে যখন পারলে না, এই মাতৃহীন শিশুটি গেল তার কাকির কাছে । কোলে বসে তার গলা জড়িয়ে ধরে ফ:পিয়ে ফাপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললে, “কাকি, তুমি কাকাকে বারণ করে দাও, গাছটা যেন না কাটেন।” উপায়টা ঠিক ঠাওরেছিল । ওর কাকি আমাকে ডেকে বললে, “ওগো, শনছ । আহা, ওর গাছটা রেখে দাও।” রেখে দিলাম। গোড়ায় বলাই না যদি দেখাত তবে হয়তো ওটা আমার লক্ষ্যই হত না। কিন্তু, এখন রোজই চোখে পড়ে। বছর-থানেকের মধ্যে গাছটা নিল’ক্তের মতো মস্ত বেড়ে উঠল। বলাইয়ের এমন হল, এই গাছটার পরেই তার সব চেযে স্নেহ । গাছটাকে প্রতিদিনই দেখাচ্ছে নিতান্ত নিবোধের মতো। একটা অজায়গায় এসে দড়িয়ে কাউকে খাতির নেই, একেবারে খাড়া লম্বা হয়ে উঠছে। যে দেখে সেই ভাবে, এটা এখানে কী করতে। আরও দু-চারবার এর মতুাদণ্ডের প্রস্তাব করা গেল। বলাইকে লোভ দেখালম, এর বদলে খুব ভালো কতকগুলো গোলাপের চারা আনিয়ে দেব । 劑 বললেম, “নিতান্তই শিমুলগাছই যদি তোমার পছন্দ, তবে আর-একটা চার আনিয়ে বেড়ার ধারে পতে দেব, সন্দের দেখতে হবে।”