পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাম ও শ্যাম Ves আর যত তিনি হিন্দুয়ানীর দিকে ঝাঁকতে লাগলেন, তত তঁর কাগজের প্রসার বাড়তে লাগিল । তারা যে দুটি রোগ সংগ্ৰহ করেছিলেন, সেও ঐ বড় হবার পথে। এদেশে মস্তিষ্কের বেশি চর্চা করলে যে বহুমূত্র হয়, আর হৃদয়ের বেশি। চর্চা করলে যে হাঁপানি হয়, একথা কে না জানে। বাইরের চেহারার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনের চেহারাও ফিরে গিয়েছিল। এই দশ বৎসরের মধ্যে রাম হয়ে উঠেছিলেন একজন রিফরমার, আর শ্যাম একজন নব্য-হিন্দু। সমাজ-সংস্কার ছাড়া রামের মুখে অপর কোনও কথা ছিল না, আর বেদান্ত ছাড়া শ্যামের মুখে অপর কোনও কথা ছিল না। রাম বলতেন বাল্য-দিবাত বন্ধ না হলে দেশের কোনও উন্নতি হবে না, আর শ্যাম বলতেন ‘অথাতে ব্ৰহ্ম জিজ্ঞাসা” না করলে দেশের কোনও উন্নতি হবে না। রাম বলতেন যে দেশের লোক যদি শক্তিশালী হতে চায় তা তাদের Eugenics মেনে চলতে হবে, আর শ্যাম বলতেন, ওর জন্য “শাস্ত্রযোনীত্বাৎ” মেনে চলতে হবে। রাম বলতেন জাতিভেদ তুলে দিতে হবে, শ্যাম বলতেন বর্ণাশ্রম ধর্ম ফিরিয়ে আনতে হবে। এক কথায় রাম দোহাই দিতেন পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের, আর শ্যাম প্রাচ্য দর্শনের। বলা বাহুল্য, রামের পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের জ্ঞান, আর শ্যামের প্রাচ্য-দর্শনের জ্ঞান, দুই-ই ছিল তুল্যমূল্য। এর থেকে অবশ্য মনে করে। না যে, আচারে বিচারে রাম-শ্যামের ভিতর কোনরূপ প্রভেদ ছিল। যে কৌশলে কথা মুখে রাখলেও তা পেটে যায় না, সে কৌশলে তাঁরা চিরাভ্যস্ত ছিলেন। রাম তাঁর মেয়েদের যথাসময়ে অর্থাৎ দশ বৎসর বয়সেই পাত্ৰস্ত করতেন,--- প্রধানত পাত্রের জাত ও কুল দেখে—আর নিত্য মুরগী না খেলে শ্যামের অম্বল হত, আর চায়ের বদলে Bovril না খোল তিনি জোর কলমে লেখবার মত বুকের জোর পেতেন না। সুরা অবশ্য দু’জনেই পান করতেন, উভয়ে কিন্তু এ ক্ষেত্রে এক রসের রসিক ছিলেন না । রাম খেতেন হুইস্কি আর শ্যাম ব্ৰাণ্ডি । RR