পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R8 গল্পসংগ্ৰহ সুরু করলুম, খানিকক্ষণ পরে তাতেও বিরক্তি ধরে এল। ঘরের গ্যাস জ্বেলে আবার পড়তে বসলুম। প্রথমে নিলুম আইনের বই-Ansonএর Contract। এক কথা দশ বার করে পড়লুম, অথচ offer এবং acceptance-এর এক বর্ণও মাথায় ঢুকাল না। আমি জিজ্ঞেস করলুম “তুমি এতে রাজি ?” তুমি উত্তর করলে “আমি ওতে রাজি ।”— এই সোজা জিনিষটিকে মানুষ কি জটিল করে তুলেছে, তা দেখে মানুষের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে হতাশ হয়ে পড়লুম! মানুষে যদি কথা দিয়ে কথা রাখত, তাহলে এই সব পাপের বোঝা আমাদের আর বইতে হত না। তঁর খুরে দণ্ডবৎ করে Amsonকে সেলফের সর্বোচ্চ থাকে তুলে রাখলুম। নজরে পড়ল সুমুখে একখানা পুরনো Punch পড়ে রয়েছে। তাই নিয়ে ফের বসে গেলুম। সত্যি কথা বলতে কি, সেদিন Punch পড়ে হাসি পাওয়া দূরে থােক, রাগ হতে লাগল। এমন কলে-তৈরী রসিকতাও যে মানুষে পয়সা দিয়ে কিনে পড়ে, এই ভেবে অবাক হলুম! দিব্যচক্ষে দেখতে পেলুম যে পৃথিবীর এমন দিনও আসবে, যখন Made in Germany এই ছাপমারা রসিকতাও বাজারে দেদার কাটবে। সে যাই হোক, আমার চৈতন্য হল যে, এ দেশের আকাশের মত এ দেশের মনেও বিদ্যুৎ কালে-ভদ্রে এক-আধবার দেখা দেয়-তাও আবার যেমন ফ্যাকাসে, তেমনি এলো । যেই এই কথা মনে হওয়া, অমনি Punch-খানি চিমনির ভিতর গুজে দিলুম,--তার আগুন আনন্দে হেসে উঠল। একটি জড়পদার্থ Punchএর মান রাখল দেখে খুসি হলুম! তারপর চিমনির দিকে পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে মিনিট-দশোক আগুন পোহালুম। তারপর আবার একখানি বই নিয়ে পড়তে বসলুম। এবার নভেল । খুলেই দেখি ডিনারের বর্ণনা । টেবিলের উপর সারি সারি রূপের বাতিদান, গাদা গাদা রূপার বাসন, ডজন ডজন হীরের মত পল-কাটা চকচকে ঝকঝকে কঁচের গেলাস। আর সেই সব গোলাসের ভিতর, স্পেনের ফ্রান্সের জর্মানির মদ,-তার কোনটির রঙ চুনির কোনটির পান্নার, কোনটির পোখরাজের। এ নভেলের নায়কের নাম