পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সোমনাথের কথা তোমরা আমাকে বরাবর ফিলজফার বলে ঠাট্ট করে এসেছ, আমিও অদ্যাবধি সে অপবাদ বিনা। আপত্তিতে মাগা পেতে নিয়েছি। রমণী যদি কবিত্বের একমাত্র আধার হয়, আর যে কবি নয়। সেই যদি ফিলজফার হয়, তাহলে আমি অবশ্য ফিলজফার হয়েই জন্মগ্রহণ করি। কি কৈশোরে, কি যৌবনে, স্ত্রীজাতির প্রতি আমার মনের কোনরূপ টান ছিল না। ও জাতি আমার মন কিংবা ইন্দ্ৰিয় কোনটিই স্পর্শ করতে পারত না । স্ত্রীলোক দেখলে আমার মন নরমও হত না, শক্তও হত না। আমি ও-জাতীয় জীবদের ভালও বাসতুম না, ভয়ও করত্নম না, -এক কথায়, ওদের সম্বন্ধে আমি স্বভাবতঃই সম্পূৰ্ণ উদাসীন ছিলুম। আমার বিশ্বাস ছিল যে, ভগবান আমাকে পৃথিবীতে আর যে কাজের জন্যই পাঠান, নায়িকা-সাধন করবার জন্য পাঠাননি। কিন্তু নারীর প্রভাব যে সাধারণ লোকের মনের উপর কত বেশি, কত বিস্তৃত, আর কত স্থায়ী, সে বিষয়ে আমার চোখ কান দু-ই সমান খোলা ছিল । দুনিয়ার লোকের এই স্ত্রীলোকের পিছনে পিছনে ছোট-টা আমার কাছে যেমন লজ্জাকর মনে হত, দুনিয়ার কাব্যের নারীপূজাটাও আমার কাছে তেমনি হাস্যকর মনে হত। যে প্ৰবৃত্তি পশুপক্ষী গাছপালা ইত্যাদি প্রাণীমাত্রেরই আছে, সেই প্ৰবৃত্তিটিকে যদি কবিরা সুরে জড়িয়ে, উপমান সাজিয়ে, ছন্দে নাচিয়ে, তার মোহিনী শক্তিকে এত বাড়িয়ে না তুলতেন, তাহলে মানুষে তার এত দাস হয়ে পড়ত না। নিজের হাতে-গড় দেবতার পায়ে মানুষে যখন মাথা ঠেকায়, তখন অভক্ত দর্শকের হাসিও পায়, কান্নাও * gŠeternal feminine-43 Šolajš o to šo একটা tragi-comedy করে তুলেছে। একটি বর্ণাচারা দৈহিক প্রবৃত্তিই যে পুরুষের নারীপূজার মূল, এ কথা অবশ্য তোমরা কখনও স্বীকার করনি। তোমাদের মতে যে জ্ঞান পশুপক্ষী গাছপালার ভিতর নেই, শুধু মানুষের মনে আছে,--অর্থাৎ সৌন্দৰ্যজ্ঞান,--তা-ই হচ্ছে