পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३७७ গল্প-গ্রন্থাবলী পড়েছি ষবনের হাতে খানা খেতে বলে সাথে ।" —আমারও হইয়াছে তাই। : তাঁহার প্রশ্নের উত্তরে আমি বলিলাম, “সন্ধা আগে বাড়ী আসকে, তার পর খাব।” তিনি আর কোন কথা না বলিয়া, আহার শেষ করিয়া উঠিলেন। আমি তাঁহাকে পাণ-জল দিলাম, ভূত্য তামাক সাজিয়া দিল। ক্লমে রাত্রি দশটা বাজিল, কিন্তু সন্ধা ফিরিল না। মা হওয়া বড় জবালা ! বারান্দায় গিয়া দাঁড়াইয়া পথের পানে চাহিয়া রহিলাম। ভূতও লন্ঠন লইয়া ছেলেকে খুজিতে বাহির হইবে কি না ভাবিতেছি, এমন সময় আমাদের বাড়ী উঠিবার পথে টচে-লাইট পড়িল । ঐ বোধ হয় সন্ধা অসিতেছে। * টচ্চ-লাইট আমাদের বাড়ীর দিকেই উঠিতে লাগিল । সধা আসিল। “হ্যাঁ রে, এত রাত্তির করলি কেন ?" বলিয়া তাহার মুখের পানে চাহিয়া ভীত হইয়া পড়িলাম । মুখ শুকাইয়া এতটুকু হইয়া গিয়াছে, চোখের দটিও কেমন বিভ্রান্ত। উদ্বেগপণ" কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিলাম, “হ্যাঁ বাবা, শরীর ভাল আছে ত ?” বলিয়া তাহার কপালে হাত দিয়া দেশখলাম, গরম নয়। “চল মা, বলছি”—বলিয়া সধা তাহার ঘরের দিকে অগ্রসর হইল। নিজ কক্ষে প্রবেশ করিয়া তত্ত্বপোষের উপর বসিয়া সন্ধা বলিল, “তোমাদের খাওয়াদাওয়া হয়ে গেছে মা ?" বলিলাম, “উনি খেয়েছেন, খাকীও খেয়েছে।” “তুমি খাওনি কেন মা ?” "ছেলের খাওয়া না হলে মা কি খেতে পারে বাবা ?” সন্ধা দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া ফোঁস-ফোঁস করিয়া কাঁদিতে লাগিল। আমি তাহার পাশে বসিয়া মুখ হইতে হাত টানিয়া খলিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “কেন বাবা অমন করছিস ? কি হয়েছে ?” সন্ধা ইঠাৎ তক্তপোষ হইতে নামিয়া আমার দই পা জড়াইয়া ধরিয়া পায়ের উপর মুখ গজিয়া কুন্দনের স্বরে বলিল, “আমি বড় অভাগা, মা ! আমায় তুমি মাফ কর।” আমি তাহাকে উঠাইতে চেষ্টা করিতে করিতে বলিলাম, "কেন রে, কি হয়েছে, শীগগির বল বাবা, আমার যে কান্না পাচ্ছে।” সন্ধা বলিল, “তোমাদের কথার অবাধ্য হয়ে, তোমাদের মনে দুঃখ দিয়ে, ঘড়িকে আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, সে সঙ্কল্প আমি পরিত্যাগ করেছি মা। আমার অপরাধ তোমরা ক্ষমা কর।” A. এ কথা শুনিয়া আনন্দে মন উল্লসিত হইয়া উঠিল। মনে মনে বলিলাম, “জয় মা মঙ্গলচণ্ডী, এ কলিতে তুমিই মা জাগ্রত দেবতা। ষোল আনার পজো মেনেছিলাম, আমি বরিশ আনার পজো তোমায় দেব মা—কলকাতায় ফিরেই।” কিন্তু মনের আনন্দ মনেই চাপিয়া, দুঃখের অভিনয় করিয়া বলিলাম, “তা সে সঙ্কলপ পরিত্যাগ করেছ, ভালই করেছ। কিন্তু কি হ’ল বাবা ?” . সন্ধা ফোঁপাইতে ফোঁপাইতে বলিল, “মহাত্মাকে সে অপমান করেছে মা !” “কি ক’রে অপমান করলে ?” - "মহাত্মাকে সে গান্ধী-চ্যাপ বলেছে, আরও অকথা কুকথা বলেছে।” “কি রকম ? তোমার সাক্ষাতে এমন সব কথা বলতে সে সাহস করলে ?” “আমার সাক্ষাতে নয় মা। আমি তার সঙ্গে রোজ যেমন বেড়াই, তেমনি বেড়িয়ে, তাকে উপদেশ-টপদেশ দিয়ে বাড়ী আসছিলাম। সেও বাড়ীর দিকে গেল। খানিক