পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

もゞ0 গল্প-গ্রন্থাবলী সপরিবারে দেশে ফিরিয়া, ঘর-দয়ার কতক কতক মেরামত করিয়া, নিজ গ্রামে তিনি বসবাস আরম্ভ করিলেন, কিন্তু মনও টিকিল না, তাহার উপর ম্যালেরিয়ার জালায় অস্থির হইয়া উঠিলেন। তখন সারদাবাব গ্রামের বাস উঠাইয়া, কলিকাতায় আসিয়া, ভবানীপরে একটি দ্বিতল বাটী খরিদ করিয়া পথায়ী হইয়া বসিলেন। তাহার দই পত্র তিন কন্যা। বড় ছেলেটি লাহোরে চাকরি করিতেছে এবং সপরিবারে সেখানেই আছে। ছোট ছেলে লাহোর কলেজে বি-এ পড়িতেছে। বড় মেয়েটির বিবাহ হইয়াছে, সে নিজ বশরালয় লক্ষেীয়ে থাকে। ছোট মেয়ে চৌদ্দ বৎসরে পড়িয়াছে, তাহার বিবাহ এখনও দিয়া উঠিতে পারেন নাই, সেজন্য সারদাবাব গহিণীর নিকট নিত্য গঞ্জনা লাভ করেন। ভবানীপুরে আসিয়া সারদাবাব উৎসাহের সহিত আদিগঙ্গায় প্রাতঃস্নান আরম্ভ করিয়া দিলেন । এই সত্রে পাড়ার আর কয়েকজন গঙ্গাস্নানাথী" ভদ্রলোকের সঙ্গে তাঁহার আলাপ পরিচয় হইয়া গেল। তাঁহারাও সারদাবাবর মতই নিকমর্ণ ও পরিণতবয়স্ক। ক্রমে পরপরের গহে যাতায়াত এবং পরিণামে সারদাবাবরেই বৈঠকখানায় আড়া পথাপন হইল। প্রত্যহ সন্ধ্যার পর বন্ধরো একে একে আসিয়া উপস্থিত হন । সারদাবাব পশ্চিমে ছিলেন, টাকাও রোজগার করিয়াছেন বিস্তর, দিল ছিল দরিয়ার মত বিস্তুত, আতিথ্য-বিষয়ে চিরদিন মন্ত-হন্তই ছিলেন। এখানেও চা-চর্ট তামাক বিতরণে কাপ"ণ্য কর; তাঁহার ধাতে সহিল না। যে বন্ধগোল সংগ্ৰহ হইয়াছিল, তাঁহাদের মধ্যে একটির প্রতি সারদাবাবর মনোযোগ বিশেষভাবে আকৃচট হইল। তাঁহার নাম ভগবতীচরণ চট্টোপাধ্যায়। বয়স তাঁহার সারদাবাবর চেয়ে দলই এক বৎসর বেশীই হইবে । তিনিও গভর্ণমেণ্টের পেন্সন-ভোগী । ঠিক পাড়ায় নয়, একট দরেই তাঁহার গহ । তথাপি এই আড়ায় আসিয়া প্লায়ই তিনি হাজিরা দেন । এখন, ইহার প্রতি সারদাবাবরে বিশেষ আকর্ষণের কারণটা খলিয়া বলি। ভগবতীবাবরে একটি পত্র আছে, বছর প’চিশ ছাব্বিশ তার বয়স। তাহার নাম কুলদাচরণ, সেই ভগবতীবাবর একমাত্র পত্র। বছর পাঁচেক পর্বে কুলদার বিবাহ হইয়াছিল, আজ এক বৎসর কাল সে বিপত্নীক। প্রথম সন্তান প্রসব করিবার কালেই কুলদার স্ত্রী মারা যান, একটি ছেলে হইয়াছিল : সেটি সাতদিন মাত্র জীবিত ছিল। কুলদা আই-এ পাস করিয়া আপিসে ঢুকিয়াছিল, এখন পচাত্তর টাকা বেতন পায়। আপিস ভাল, উন্নতির আশা আছে, ছেলেটি দেখিতেও ভাল, তার উপর বেশ বৃদ্ধিমান ও সচ্চরিত্র। ভবানীপুরে আসিয়াও সারদাবাব মেয়ের জন্য পাত্রের সন্ধান করিতেছিলেন, সুবিধা মত অন্য কোন পাত্র যদি না-ই পাওয়া যায়, তলে কুলদার সঙ্গে কনিষ্ঠ কন্যার বিবাহের সম্মবন্ধ করবেন, ইহাই তাঁহার মনোগত অভিপ্রায় । কিন্তু ভগবতীবাবর সাক্ষাতে এখনও এ কথা তিনি পাড়েন নাই। আরও ভাল পাত্র যদি পাই, এই আশায়, কিছুদিন কাটাইলেন। কিন্তু তেমন মনের মত পাত্র জটিতেছে না দেখিয়া, অবশেষে ভগবতীবাবরে কাছে তিনি কথাটা পাড়িলেন। সেদিন সন্ধ্যায় ঘটনাক্রমে অন্য কোনও বন্ধ সারদাবাবর বৈঠকখানায় উপস্থিত ছিলেন না। ভূত্য আসিয়া দই পেয়ালা চা দিয়া গেল। চা-পান করিতে করিতে সারদাবাব ভগবতীবাবকে বলিলেন, "চাট যো-মশাই, আপনার বেীমা তো প্রায় একবৎসর হল গত হয়েছেন, ছেলের বিয়ে দিচ্চেন না কেন ? আমার ছোট মেয়েটিকে আপনি দেখেছেন তো! মেয়ে বড় হয়েছে, সাজবেও ভাল আপনার ছেলের সঙ্গে। যদি মত করেন—” ভগবতীবাবু বলিলেন, “মেয়ে ত আপনার খাসা মেয়ে। কিন্তু হলে হবে কি ! ছেলের বিয়ে আমি কি ইচ্ছে করে দিচ্চিনে সারদাবাব ? ছেলে রাজি হয় কই ?”