পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

బిపి 8 গল্প-গ্রন্থাবলী কলেজে ধাত্রী-বিদ্যার অধ্যাপক এবং উক্ত কলেজসংলগ্ন হাসপাতালে প্রসতি-বিভাগের বড় কত্তা। এই বাড়ীখানি তাঁহার নিজস্ব নহে, ভাড়াটিয়া বাড়ী। তাই বলিয়া কলিকাতা সহরে তাঁহার নিজের বাড়ী যে নাই, এমন নহে। ইটালী পদ্মপক্সেরে তাঁহার পৈতৃক বাটী রহিয়াছে, তাহা ভাড়া খাটে। বিবেকানন্দ রোডের উপর তাঁহার একখানি ত্রিতল বাটী নিমিত হইতেছে। নিম্মাণ শেষ হইলে উহাও আপাততঃ তিনি ভাড়া দিবেন বলিয়া প্রকাশ। নিজের বাড়ী থাকিতে ভাড়াটিয়া বাড়ীতে বাস করিবার কারণ এই যে, তাহার প্র্যাকটিসটা এই অঞ্চলেই বেশী, অন্যত্র বাস করা তাঁহার ব্যবসায়ের পক্ষে ক্ষতিজনক হইতে পারে। কলেজের বেতনে এবং প্র্যাকটিসে ডাক্তার সাহেব প্রচার অর্থ উপাজন করেন। তাহার গহিণীর দুই সেট জড়োয়া গহনা এবং কোপানীর কাগজে লোহার সিন্দকে ভত্তি । তাঁহার দুইখানা মোটরকার, সমাজে মানসম্প্রমও যথেষ্ট, কিন্তু তাঁহার মনে সখে নাই । তাঁহারও নাই, তাঁহার সন্ত্রীরও নাই। তাঁহারা নিঃসন্তান, ইহাই তাঁহাদের মন পতাপের কারণ। ডাক্তার সাহেবের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, তাঁহার সত্ৰী বিভাবতীর বয়স চল্লিশ, সুতরাং সন্তান হইবার আশা-ভরসাও অনেক কাল বিলুপ্ত হইয়াছে। বষাকাল, শ্রাবণ মাস, কয়েক দিন বটি বন্ধ হইয়া, গরমটা অসহ্য হইয়া উঠিয়াছে। সবাহৎ শয়নকক্ষে ঘণায়মান বিদ্যুৎপাখার নিনে পালকোপরি ডাক্তার-দম্পতি আরামে নিদ্রা যাইতেছেন। পশ্চিম দিকের তিনটি জানালা সম্পণভাবে মুক্ত, সেই জানালা দিয়া ক্ষীণ উষালোক প্রবেশ করিতেছে। গহোদানের বক্ষশাখাবাসী কাকরা ডাকাডাকি করিতেছে, এখনও মনপ্ৰিথর করিয়া উঠিতে পারে নাই। এমন সময় হঠাৎ ডাক্তার সাহেবের নিদ্রাভঙ্গ হইল—বন্ধ বারে বাহির হইতে কে সঘন করসন্তাড়ন করিতেছে। “কে ?”— বলিয়া ডাক্তার সাহেব শষ্যায় উঠিয়া বন্সিলেন। “মা, মা, গিন্নীমা !” বেড়সইচ টিপিয়া আলো জালিয়া ডাক্তার সাহেব ঘড়ী দেখিলেন, মাত্র পাঁচটা । এখনও এক ঘণ্টা দেড় ঘণ্টা ঘুমাইবার কথা—অসময়ে এ কি উৎপাৎ ? বিরক্তিতে ডাক্তার সাহেবের ভ্র কুঞ্চিত হইল। জিজ্ঞাসা করিলেন, "কে ? ঝি ?” উত্তর হইল—“আজ্ঞে । দোরটা খলন, বাব৷ ” বিলাত-ফেরত ডাক্তার সাহেবের পত্নী গিন্নীমা ? মেমসাহেব নহেন ? তাঁহার পারচারিকা যে, সে ঝি : আয়া নহে ? আর সেই অসভ্য ঝি প্রভুকে বলে বাবা ? হজের বলে না ? কিন্তু ইহার বিশিষ্ট কারণ আছে। গৃহকত্রী বিভাবতীর মতামত এ সব বিষয়ে অত্যন্ত অদ্ভুত। তাঁহাকে কেহ মেমসাহেব বলিলে তিনি দস্তুরমত চটিয়া যান। টেবিলে বসিয়া কাঁটা-চামচ সহযোগে আহার করেন বটে, কিন্তু রাঁধে ও পরিবেষণ করে বামন ঠাকুর। তবে তিনি যে ঘোর হিন্দ বলিয়া বা অশিক্ষিতা বলিয়া এরপ করেন, তাহাও নহে। তিনি বেথুনে পড়া মেয়ে, দুইটা পাশ করিয়াছিলেন এবং আজিও স্বামীর সহিত ইংরাজি হোটেলে গিয়া নিষিদ্ধ পক্ষীর মাংস গ্রহণেও আপত্তি করেন না। “বাবা, দোরটা একবার খলেন।” ডাক্তার সাহেব ইতিমধ্যে শয্যা হইতে নামিয়া চেয়ারের উপর হইতে ড্রেসিং গাউনটা লইয়া গায়ে দিয়াছিলেন। দবার মোচন করিয়া দেখিলেন, ঝি সোণার মা দাঁড়াইয়া ঠক-ঠক করিয়া কপিতেছে, ভয়ে মুখ তাহার বিবণ, নিঃশ্বাস ঘন ঘন পড়িতেছে। ডাক্তার সাহেব তাহার মাত্তি দেখিয়া বিস্মিত ও কিঞ্চিৎ ভীত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হয়েছে, ঝি ?” সোণার মা রন্ধশবাসে বলিল, “আজ্ঞে, ছেলে ।” ডাক্তার বলিলেন, “ছেলে র কার ছেলে ? কি হয়েছে তার ?”