পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OH গল্প-গ্রন্থাবলী বয়স ২৫ বৎসর হইয়াছে, কিন্তু অদ্যাপি এই দম্পতি একটি সন্তানের মুখ দেখিবার সৌভাগ্য লাভ করিতে পারে নাই। ইহাতে দুইজনই মনক্ষণ—বোধ হয় সশীলাই বেশী। পলিনবাব পাড়াগাঁয়ের ক্ষুদ্র জমিদার। তবে, পাড়াগাঁয়ে বাস করিলেও তিনি নিজে পাড়াগেয়ে মহেন—কারণ, প্রথমতঃ গ্রামটি কলিকাতা হইতে অধিক দরে নহে-রেলে ৫।৬ ঘণ্টার পথ মাত্র ; দ্বিতীয়তঃ বিবাহের পর কলিকাতায় গিয়া তিনি কিছুদিন লেখাপড়া করিয়া, সভ্য ভব্য হইবার সুযোগ পাইয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহার পত্নী সশীলা নিজজলা পাড়াগে’য়ে। আত্মীয় পরিবার, পাড়া প্রতিবেশী যখন দেখিল যে সশীলার ২০ বৎসর বয়স হইয়া গেল, তথাপি সন্তান হইল না, তখন সকলেই তাহকে "বাজা" বলিয়া স্থির করিল। অনেকেই বলিতে লাগিল, পলিনের আবার বিবাহ করা উচিৎ, নচেৎ বংশলোপ অনিবাব্য। পরেষেরা বলিল, পলিন যদি সন্ত্রীর ভয়ে বিবাহে বিরত থাকিয়া, পিতৃপরিষের জলপিন্ডের আশা নষ্ট করে, তবে তার তুল্য নরাধম আর জগতে নাই। স্মীলোকেরা—ঘাঁহারা প্রবীণা হইয়াছেন—বলিতে লাগিলেন, সবাথের জন্য স্বামীকে পুনরায় বিবাহ করিতে না দেওয়া, সশীলার অত্যন্ত গহিত কাজ হইতেছে এবং এরপে কাৰ্য্য শধে বৰ্ত্তমান যাগেই সম্ভব —তাঁহাদের আমলে এরপে ঘাঁটতে কখনও শোনা যায় নাই। তাঁহারা মাঝে মাঝে এই লইয়া সমশীলাকে মদ গঞ্জনা দিত্বেও জটি করেন না। এইরুপে উত্যক্ত হইয়া, সুশীলা কিছু দিন হইতে স্বামীকে পনেরায় বিবাহ করিবার জন্য অনুরোধ করিতেছে; কিন্তু পলিন সে কথা কাণেই তুলেন না। সংসারে এখন সুশীলাই গহিণী। একটি বিধবা ননদ ও একটি বিধবা যা আছে —তাহারা সুশীলার বয়ঃকনিষ্ঠ। আজ গ্রামে একটা নিমন্ত্রণে গিয়া, সুশীলা কয়েকজন গিলিবামী রমণীর তীক্ষা মন্তব্য শুনিয়া আসিয়া মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিয়াছে, স্বামীকে পুনরায় বিবাহ করিতে রাজি করিবে, নচেৎ— নচেৎ, গঙ্গায় ডবিবে, অথবা বিষ খাইবে, অথবা পিরালয়ে চলিয়া যাইবে, তাহা সে এখনও স্থির করিতে পাবে নাই। রাত্রে আহারাদির পর শয্যায় প্রবেশ করিয়া, স্বামীর নিকট সুশীলা এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করিল। _ পলিন বলিল, “দরে পাগলী " সুশীলা বলিল, এটা আমার পাগলামি হল কিসে : বিয়ে করলে যদি একটি ছেলেব মুখ দেখতে পাও, বাপ-পিতামো যদি জলপিণ্ডি পান, সেটা কি তোমার করা উচিত নয ?” পলিন বলিল, “দেখ সশী, বিয়ে আমি একটা কেন দশটা করতে পারি। কিন্তু জান ত, যেমন স্ত্রীলোক বাঁজা আছে, তেমনি পর্ষ বাঁজাও আছে। আমি যদি সেই রকম পর্ষ হই—তাহলে সে সম্প্রীরও সন্তান হবে না। চিরদিনের জন্যে মিছে কেবল তোমায় সতীনের যন্ত্রণা দিয়ে যাব সেটা কি ভাল ?” সশীলা গভীর ভাবে বলিল, “কে বললে তোমার ছেলে হবে না ? তা ছাড়া, আমায় সতীনের যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে তারই বা মানে কি ? তুমি কি নতুন বউ এনে আমাকে আর খেতে দেবে না, না পরতে দেবে না, না আমায় বিষনয়নে দেখবে ? সে রকম লোক তুমি নও, তা আমি বিলক্ষণ জানি।” পলিন পাশ ফিরিয়া, পাশের বালিস অাঁকড়িয়া ধরিয়া বলিল, “রাত ১২টা বাজে, এখন একটা ঘামতে দেবে ? না, খালি গজর গজর করবে ?” সশীলা চপ করিয়া গেল।