পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
গল্প-দশক।

গো-গর্দ্দভ যে পরীক্ষায় পাস করিতেছে সে পরীক্ষা দিয়া অনাথবন্ধুর গৌরব কি আর বাড়িবে!

 প্রতিবেশিনী কমলা তাহার বাল্যসখী বিন্দিকে আনন্দ সহকারে খবর দিতে আসিল যে, তাহার ভাই রমেশ এবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া জলপানী পাইতেছে। শুনিয়া বিন্ধ্যবাসিনী অকারণে মনে করিল, কমলার এই আনন্দ বিশুদ্ধ আনন্দ নহে, ইহার মধ্যে তাহার স্বামীর প্রতি কিঞ্চিৎ গূঢ় শ্লেষ আছে। এই জন্য সখীর উল্লাসে উল্লাস প্রকাশ না করিয়া বরং গায়ে পড়িয়া কিঞ্চিৎ ঝগড়ার সুরে শুনাইয়া দিল, যে, এল্‌, এ, পরীক্ষা একটা পরীক্ষার মধ্যেই গণ্য নহে; এমন কি, বিলাতের কোন কলেজে বি, এ,র নীচে পরীক্ষাই নাই। —বলা বাহুল্য, এ সমস্ত সংবাদ এবং যুক্তি বিন্ধ্য স্বামীর নিকট হইতে সংগ্রহ করিয়াছে।

 কমলা সুখসংবাদ দিতে আসিয়া সহসা পরম প্রিয়তমা প্রাণসখীর নিকট হইতে এরূপ আঘাত পাইয়া প্রথমটা কিছু বিস্মিত হইল। কিন্তু সেও না কি স্ত্রীজাতীয় মনুষ্য, এই জন্য মুহূর্ত্তকালের মধ্যেই বিন্ধ্যবাসিনীর মনের ভাব বুঝিতে পারিল এবং ভ্রাতার অপমানে তৎক্ষণাৎ তাহারও রসনাগ্রে একবিন্দু তীব্র বিষ সঞ্চারিত হইল; সে বলিল, আমরা ত ভাই বিলাতেও যাই নাই, সাহেব স্বামীকেও বিবাহ করি নাই অত খবর কোথায় পাইব! মূর্খ মেয়েমানুষ, মোটামুটি এই বুঝি যে, বাঙ্গালীর ছেলেকে কালেজে এল্‌, এ, দিতে হয়;—