পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রায়শ্চিত্ত।

তাও ত ভাই সকলে পারে না। অত্যন্ত নিরীহ এবং সুমিষ্ট বন্ধুভাবে এই কথাগুলি বলিয়া কমলা চলিয়া আসিল। কলহবিমুখ বিন্ধ্য নিরুত্তরে সহ্য করিল এবং ঘরে প্রবেশ করিয়া নীরবে কাঁদিতে লাগিল।

 অল্পকালের মধ্যে আর একটি ঘটনা ঘটিল। একটি দূরস্থ ধনী কুটুম্ব কিয়ৎকালের জন্য কলিকাতায় আসিয়া বিন্ধ্যবাসিনীর পিত্রালয়ে আশ্রয় গ্রহণ করিল। তদুপলক্ষে তাহার পিতা রাজকুমার বাবুর বাড়ীতে বিশেষ একটা সমারোহ পড়িয়া গেল। জামাই বাবু বাহিরের যে বড় বৈঠকখানাটি অধিকার করিয়া থাকিতেন নবঅভ্যাগতদের বিশেষ সমাদরের জন্য সেই ঘরটি ছাড়িয়া দিয়া তাঁহাকে মামা বাবুর ঘরে কিছুদিনের জন্য আশ্রয় লইতে অনুরোধ করা হইল।

 এই ঘটনায় অনাথবন্ধুর অভিমান উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল। প্রথমতঃ স্ত্রীর নিকট গিয়া তাহার পিতৃনিন্দা করিয়া তাহাকে কাঁদাইয়া দিয়া শ্বশুরের উপর প্রতিশোধ তুলিলেন। তাহার পরে অনাহার প্রভৃতি অন্যান্য প্রবল উপায়ে অভিমানপ্রকাশের উপক্রম করিলেন। তাহা দেখিয়া বিন্ধ্যবাসিনা নিরতিশয় লজ্জিত হইল। তাহার মনে যে একটি সহজ আত্মসন্ত্রমবোধ ছিল, তাহা হইতেই সে বুঝিল, এরূপ স্থলে সর্ব্বসমক্ষে অভিমান প্রকাশ করার মত লজ্জাকর আত্মাবমাননা আর কিছুই নাই। হাতে পায়ে ধরিয়া কাঁদিয়া কাটিয়া বহু কষ্টে সে তাহার স্বামীকে ক্ষান্ত করিয়া রাখিল।