অনাথবন্ধু পদাহত সর্পের ন্যায় গর্জ্জন করিয়া বলিয়া উঠিলেন, দুই বেলা দুই মুষ্টি অত্যন্ত অখাদ্য মোটা ভাতের পর এত খোঁটা সহ্য হয় না। তৎক্ষণাৎ স্ত্রীকে লইয়া শ্বশুরবাড়ি যাইতে সংকল্প করিলেন।
কিন্তু স্ত্রী কিছুতেই সম্মত হইল না। তাহার মতে ভাইয়ের অন্ন এবং ভাজের গালিতে কনিষ্ঠের পারিবারিক অধিকার আছে কিন্তু শ্বশুরের আশ্রয়ে বড় লজ্জা। বিন্ধ্যবাসিনী শ্বশুরবাড়িতে দীনহীনের মত নত হইয়া থাকিতে পারে, কিন্তু বাপের বাড়িতে সে আপন মর্য্যাদা রক্ষা করিয়া মাথা তুলিয়া চলিতে চায়।
এমন সময় গ্রামের এণ্ট্রেন্সস্কুলের তৃতীয় শিক্ষকের পদ খালি হইল। অনাথবন্ধুর দাদা এবং বিন্ধ্যবাসিনী উভয়েই তাঁহাকে এই কাজটি গ্রহণ করিবার জন্য পীড়াপীড়ি করিয়া ধরিলেন। তাহাতেও হিতে বিপরীত হইল। নিজের ভাই এবং একমাত্র ধর্ম্মপত্নী যে তাঁহাকে এমন একটা অত্যন্ত তুচ্ছ কাজের যোগ্য বলিয়া মনে করিতে পারেন, ইহাতে তাঁহার মনে দুর্জ্জয় অভিমানের সঞ্চার হইল এবং সংসারের সমস্ত কাজকর্ম্মের প্রতি পূর্ব্বাপেক্ষা চতুর্গুণ বৈরাগ্য জন্মিয়া গেল!
তখন আবার দাদা তাঁহার হাতে ধরিয়া মিনতি করিয়া তাঁহাকে অনেক করিয়া ঠাণ্ডা করিলেন। সকলেই মনে করিলেন, ইহাকে আর কোন কথা বলিয়া কাজ নাই, এ এখন কোন প্রকারে ঘরে টিঁকিয়া গেলেই ঘরের সৌভাগ্য।