পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

সুশিক্ষিত করিতে গিয়া তিনি সর্ব্বস্বাস্ত হইয়াছেন। বরাবর শুনিয়া আসিয়াছি যে, পিতা বিত্তশালী কিন্তু কৃপণ, গ্রামে তাঁহার যে একটু অখ্যাতি আছে তাহাও জানিতাম। আমার বিবাহের পরে যখন বধূ লইয়া বাড়ী আসিলাম তখন আমার পিতা বরবধূ বরণের পূর্ব্বে বন্ধুর অঙ্গের অলঙ্কারগুলি খুলিয়া ওজন করিয়া লইয়াছিলেন, তাহাও শুনিয়াছিলাম। কি করিব, উপায় নাই, দেশে ফিরিলাম।

 নিত্য শামলা মাথায় দিয়া কাছারি যাই; শূন্য পকেট ও শূন্য উদর লইয়া ফিরিয়া আসি। পিতার হৃদয়ে দয়ামায়ার স্থান ছিল না। তিনি প্রায়ই আমার উপার্জ্জনের অভাব দেখিয়া জানাইতেন যে তিনি আর আমাদিগের (অর্থাৎ আমার ও আমার স্ত্রীর) ভরণ-পোষণের ভার গ্রহণ করিতে পারবেন না। তখন মনে বড়ই ঘৃণা হইত, ভাবিতাম যেমন করিয়া পারি উপার্জ্জন করিব। তাহার পরদিন শামলাটা মাথায় জোর করিয়া টিপিয়া বসাইয়া আদালতে যাইতাম, দুই এক জন বড় উকীলের মুহুরীর ও দালালের তাড়া খাইয়া স্থির করিতাম এ জঘন্য বৃত্তি পরিত্যাগ করিয়া মোট বহির, ওকালতী করিয়া অর্থ উপার্জ্জন করা আর হইবে না।

 বলা বাহুল্য এ পর্যন্ত আমি নিঃসন্তান। মাতা মধ্যে মধ্যে দুঃখ করিতেন, তাহা শুনিয়া আমি মনে মনে হাসিতাম, ভাবিতাম পিতা ত পুত্রের ব্যয়ভার বহনেই অসমর্থ; পৌত্র-পৌত্রীর আবির্ভাব হইলেই তিনি হয় ত আমাদিগকে বিদায় করিয়া দিবেন। কিন্তু মাতার দুঃখ ক্রমে অভিযোগে পরিণত হইল। পিতা বুঝিলেন তাঁহার পৌত্রী ভাবের জন্য বধুই দোষী এবং মাতাও ক্রমশঃ বধূর পক্ষ পরিত্যাগ

৮৪