পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

টমি।

 বাঙ্গালা দেশ ত্যাগ করিয়া তখন আমি বহুদূরে বাস করিতেছিলাম। কিন্তু সে দেশ আর ভাল লাগিল না। অনেক দিন বাঙ্গলা দেশ দেখি নাই! তিন দিন রেলে চড়িয়া একদিন সন্ধ্যার সময় মোগলসরাই ষ্টেসনে নামিয়া কাশী আসিয়া পৌঁছিলাম। বাঙ্গালী-টোলার, একটী ক্ষুদ্র অপরিচ্ছন্ন গৃহে আমরা দুইজন—টমি আর আমি—বাসা লইলাম। তখন পূজার ছুটি, বাঙ্গালীতে কাশী ভরিয়া গিয়াছে। কত দিন পূজার ছুটির কথা শুনি নাই। যখন দেশে ছিলাম পূজার সময় কত উৎসাহ হইত, কত আমোদ করিতান। কতদিন বাঙ্গালা দেশের দশভূজা দুর্গা প্রতিমা দেখি নাই। শেষ যেবার পূজা দেখিয়াছিলাম, মিনি তখনও বাঁচিয়া ছিল। পিতা বলিয়াছিলেন—থাক্ সে কথা।

 কাশীতে আসিয়া মনে হইল যেন দেশে আসিয়াছি। বাঙ্গালী-টোলায় সকলেই বাঙ্গালী। কাশীর হিন্দুস্থানী অধিবাসীরাও সুন্দর বাঙ্গাল ভাষায় কথা কহিয়া থাকেন। বছর বছর পূজার ছুটির সময় শত, শত বাঙ্গালী ভদ্রলোক সপরিবারে কাশীতে আসিয়া থাকেন। কত বাড়ীতে শারদ-পূজা হইতেছে, ছোট ছোট ছেলে মেয়েগুলি নূতন কাপড়জামা পরিয়া ছুটাছুটি করিয়া বেড়াইতেছে। তাহা দেখিলে যে কত আনন্দ হয়, প্রবাসী ব্যতীত কেহ তাহা বুঝিতে পারে না। যে বহুকাল স্বজাতির মুখ দশন করে নাই, বহুকাল মাতৃভাষা শ্রবণ করে নাই, তাহার নিকট এজন্য—স্বর্গ। আমরা দুইজনে পথে পথে ঘুরিয়া বেড়াই, পূজা বাড়ীতে গিয়া প্রতিমা দেখিয়া আসি, সন্ধ্যার সময় ঘাটে বসিয়া থাকি, ইহাই আমাদিগের কার্য্য।

 আজ মহাষ্টমী। দলে দলে নরনারী অন্নপূর্ণার মন্দিরে চলিয়াছে।

৯১