পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

কত লোক আবার অন্নপূর্ণার মন্দির হইয়া দুর্গাবাড়ী যাইতেছে। দশাশ্বমেধ ঘাটের সিঁড়ির উপরে আমরা দুটিতে বসিয়া তাহাই দেখিতেছি। কত লোক আসিতেছে, স্নান করিয়া ফিরিয়া যাইতেছে। আমাদের দিকে কেহ ফিরিয়াও চাহে না, একবার জিজ্ঞাসাও করে না। ভাবিতেছিলাম যে, আমি যদি মরি, তাহা হইলে কেবল কাঁদিবে টমি, আর কেহ দেখিয়াও দেখিবে না। এমন কেহ নাই যে, একদিন আর শুশ্রুষা করিবে,— মরণের সময়ে মুখে জল দিবে। টমিও যেন চুপ করিয়া বসিয়া কি ভাবিতেছিল কিন্তু হঠাৎ সে অস্থির হইয়া উঠিল, একটু পরেই উঠিয়া ছুটিয়া চলিয়া গেল, কত ডাকিলাম আমার কথা কিন্তু শুনিল না। সে ত পূর্ব্বে কখনও এমন অবাধ্য হয় নাই। মনে করিলাম টমি—আমার একমাত্র সঙ্গী সেও আজ আমাকে পরিত্যাগ করিয়া গেল।

 দূরে ঘাটের অপর দিকে কতকগুলি বাঙ্গালী রমণী স্নানান্তে কথা কহিতেছেন। দেখিলাম টমি সেই দিকে ছুটয়াছে। একটি মহিলার নিকটে গিয়া সে দুই তিনবার ডাকিয়া উঠিল, তাহার পর দুই পা তাঁহার গায়ের উপর তুলিয়া দিল, লেজ নাড়িয়া হাত চাটিয়া সদ্ভাব জানাইল, তাহার পর পাগলের মত ছুটতে আরম্ভ করিল। ছুটিয়া আবার তাঁহার নিকট ফিরিয়া গেল, আবার দুই পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াইল। তখন তিনি আদর করিয়া তাহার মাথায় হাত দিলেন, টমি আনন্দে অধীর হইয়া লেজ নাড়িতে লাগিল। তিনি তাহাকে আদর করিয়া কোলে তুলিয়া লইলেন, আমি তখন দূর হইতে চীৎকার করিয়া টমিকে ডাকিতেছি। তিনি বোধ হয় তাহা শুনিতে পাইলেন, কারণ তখনই তাড়াতাড়ি টমিকে নামাইয়া দিলেন। টমি ছোট্টটি বটে, কিন্তু দেখিতে বড় সুন্দর। আমার

৯২