পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

হাত চাপিয়া ধরিল, বাতাসে আলো নিবিয়া গেল। বিজয়া দুই একবার হাত ছাড়াইবার চেষ্টা করিল,কিন্তু পারিল না। কোথা হইতে হঠাৎ তাহার দেহে অমানুষী শক্তির আবির্ভাব হইল, সে সজোরে কিরণের বুকে একটা লাথি মারিল। সে তখন মাতাল হইয়াছিল, পড়িয়া গেল। বিজয়া মুক্তি পাইয়া উর্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করিল।

 বিজয়া গৃহে ফিরিল না, ভাবিল একা পাইলে নিতাই আবার ধরিয়া লইয়া যাইবে, কোমরে কাপড় জড়াইয়া নদীতীরের দিকে ছুটিল। মুষলধারে বৃষ্টি পড়িতেছিল, ঝড়ের শব্দ ব্যতীত আর কিছুই শোনা যাইতেছিল না, অন্ধকারে কিছুই দেখা যাইতেছিল না। বিজয়া জ্ঞানশূন্য হইয়া ছুটতেছিল, বেতের কাঁটায় তাহার সর্ব্বাঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত হইল। সে বাধা পাইয়া দুই তিনবার আছাড় খাইয়া পড়িয়া গেল, কিন্তু উঠিয়া আবার ছুটিতে লাগিল। সে ভাবিতেছিল যে, নিতাই তাহার পিছনে ছুটিয়া আসতেছে।

 বিজয়া নদীতীরে একবার দাঁড়াইল। ঝড়ে ক্ষুদ্র নদীবক্ষ আলোড়িত হইতেছিল। বিজয়া ভাবিল বুঝি নৌকা আসিতেছে, আকুলকণ্ঠে ডাকিল “বাবা!” ঝড়ের শব্দে তাহার কণ্ঠস্বর ডুবিয়া গেল। নিকটে একটা গাছ পড়িল। তাহার শব্দ শুনিয়া বিজয়ী চমকাইয়া উঠিয়া ভাবিল, নিতাই আসিতেছে। সে আবার দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হইয়া দৌড়াইতে আরম্ভ করিল। ইছামতী আঁকিয়া বাকিয় “বাঁওড়ের” দিকে অগ্রসর হইয়াছে, স্থানে স্থানে জল শুকাইয়া নদীগর্ভ বালুকক্ষেত্রে পরিণত হইয়াছে, আবার স্থানে স্থানে নদীর উভয়তটে গভীর বন। নদীতীর

১০৮