বিজয়া।
বিজয়া জাগিয়া উঠিয়া দেখিল সে “বাঁওড়ের” ধারে পড়িয়া আছে, তখন পূর্ব্বদিকে উষার আলোক দেখা দিয়াছে মাত্র। সে গৃহে ফিরিল, দেখিল পিতার পরিত্যক্ত বস্ত্র পড়িয়া আছে, আর পুরাতন ছোরাখানির খাপখানি পড়িয়া আছে। বিজয়া সেই অবস্থাতেই বহির হইল, তখন পথে দুই একজন লোক চলিতে আরম্ভ করিয়াছে। একজন লোক তাহার দিকে অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করিয়া কি বলিল, সে তাহা শুনিতে পাইল না। গ্রামে প্রবেশ করিয়া শুনিল, চৌধুরী বাড়ীর দিকে গোলমাল হইতেছে। সে উৰ্দ্ধশ্বাসে সেই দিকে ছুটিল, দেখিল—উঠানে তাহার পিতার দেহ পড়িয়া আছে। অনেক লোক দাঁড়াইয়া ছিল, সে তাহা দেখিতে পাইল না, চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল “বাবা গো! আমি জাত খোয়াইনি।” এই বলিয়া বিজয়া পিতার মৃত দেহের উপরে ঝাঁপ দিয়া পড়িল, আর উঠিল না। সুদীর্ঘ ছুরিকা জয়চাঁদের দেহ ভেদ করিয়াও প্রায় অৰ্দ্ধ হস্ত বাহির হইয়া ছিল, পতন মাত্র তাহা অনাথার হৃদপিণ্ড বিদ্ধ করিল।
দশমীর প্রভাতে সানাই বিনাইয়া বিনাইয়া কাঁদিতে কাঁদিতে গাহিতে আরম্ভ করিল-
গমন সময়ে উমা, আয় মা একবার কোলে করি।
আবার কবে দেখা হবে কি জানি বাঁচি কি মরি।