গুচ্ছ।
করাইয়া, অবশেরে জীবনমোহন মাধুরীর বিবাহের সম্বন্ধ স্থির করিলেন। পাত্র কলিকাতা-নিবাসী, ধনীর সন্তান, কলিকাতার একটি বিখ্যাত কলেজের ছাত্র, প্রিয়দর্শন এবং মিষ্টভাষী। বিবাহের সম্বন্ধ স্থির হইলে বৃদ্ধের মুখে হাসি দেখা দিল। যথাসময়ে মহাসমারোহে জীবনমোহন, সৎপাত্রে পৌত্রীকে সমর্পণ করিয়া কৃতার্থ হইলেন। মাধুরীর দুইটি অলঙ্কার বাড়িল,—সীমন্তে সিন্দূর ও মস্তকে অবগুণ্ঠন।
তখন কলিকাতা মহানগরীতে মহামারী দেখা দিয়াছে। প্রতি বৎসর শীতের শেষে গৃহে গৃহে ক্রন্দনের রোল উঠে, গঙ্গাতীরে শবদাহের স্থানাভাব হয়। একদিন অকস্মাৎ বজ্রাঘাতের ন্যায় টেলিগ্রাম পাইয়া পিতাপুত্র কলিকাতায় চলিয়া আসিলেন, কিন্তু তাঁহারা আদিবার পূর্ব্বেই সব শেষ হইয়া গিয়াছে, শমন একটি সুকুমার জীবনের সহিত মাধুরীর জীবনের সকল সুখ হরণ করিয়া লইয়া গিয়াছে। পিতাপুত্রে মস্তকে হাত দিয়া বৈবাহিকের প্রাঙ্গণে বসিয়া পড়িলেন। তখন অন্তঃপুর হইতে পুত্রশোকাতুরা মাতা উন্মত্তার ন্যায় তাঁহাদিগকে গালি দিতেছিল। শুল্কমুখে মাধুরীর শ্বগুরগৃহ পরিত্যাগ করিয়া জীবনমোহন ও প্রাণমোহন বাহিরে আসিলেন। বৃদ্ধ পুত্রকে জানাইলেন যে তিনি এখন আর দেশে ফিরিতে পরিবেন না, তীর্থ পর্য্যটনে বহির্গত হইবেন। ভগ্নহৃদয়ে বিষণ্ণ বদনে গৃহে ফিরিয়া প্রাণমোহন একমাত্র কন্যার সর্ব্বনাশের কথা প্রকাশ করিলেন। মাধুরী কিছুই বুঝিল না, কারণ সে বিবাহের সময় ব্যতীত অন্য সময়ে স্বামীকে দেখে নাই, স্বামী কে তাহা বুঝিতে শিখে নাই, স্বামীর অভাব কি তাহা অনুভব করে নাই। প্রমোদাসুন্দরী ভূতলে লুটাইয়া কাঁদিতেছিলেন, তাহা দেখিয়া কন্যাও কাঁদিতে বসিল;