পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নিয়তি।

আর, তাহার অশ্রুজল দেখিয়া বিদ্যাকাঠী গ্রামের কেহই অশ্রুজল রোধ করিতে পারিল না।

 জামাতার শোক প্রাণমোহনের বুকে বড় বাজিল। তিনি গম্ভীর প্রকৃতির লোক, তাঁহার আনন্দ বা শোক লোকে জানিতে পারিত না, তাঁহাকে সান্ত্বনা করিবারও কেহ ছিল না। চৌধুরীদিগের গৃহে প্রমোদাসুন্দরীই গৃহিণী, প্রাণমোহনের মাতা বহুপূর্ব্বে স্বর্গারোহণ করিয়াছিলেন।

 যেমন করিয়া সকলের দিন কাটিয়া থাকে মাধুরীর দিনও তেমনি করিয়া কাটিতে লাগিল। ক্রমে মাধুরী বিবাহের কথা ও স্বামীর কথা ভূলিয়া গেল। মাধুরীর মাতা প্রাণ ধরিয়া তাহার অলঙ্কারগুলি খুলিয়া লইতে পারেন নাই, কিশোরী কন্যাকে হিন্দু বিধবার কঠোর জীবনব্রত অবলম্বন করাইতে পারেন নাই। ইহার জন্য তাঁহাকে বিলক্ষণ লাঞ্ছনাভোগ করিতে হইতেছিল।

 এক বৎসরের অধিককাল তীর্থপর্য্যটনে অতিবাহিত করিয়া জীবনমোহন যখন দেশে ফিরিলেন তখন পূর্ব্বের ন্যায় হাসিমুখে সালঙ্কারা নববধূর মত মাধুরী তাঁহাকে অভ্যর্থনা করিতে গেল। তাহার দাদাবাবু যে এতদিন তাহাকে কি করিয়া ভুলিয়া ছিলেন তাহা সে ভাল বুঝিতে পারে নাই। যখন তাহাকে দেখিয়া জীবনমোহনের বিষণ্ণমুখ আরও বিষন্ন হইয়া গেল তখন মাধুরীর মুখও শুকাইয়া গেল, চিরাভ্যস্ত অভ্যর্থনা ভূলিয়া গিয়া মাধুরী ধীরে ধীরে পিছাইয়া আসিল।

 গৃহে ফিরিয়া জীবনমোহন মাধুরীর বেশ পরিবর্ত্তন ও ব্রহ্মচর্য্য শিক্ষা লইয়া বড়ই ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। মাধুরীর অঙ্গে সধবার চিহ্ন রাখার

১৫