পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

পারিলাম না। এক্কাওয়ালা যখন বুঝিল যে, আমি সে স্থান ত্যাগ করিব না, তখন সে স্পষ্ট বলিল যে “আপনার থাকিতে ইচ্ছা হয় থাকুন, আমি এস্থানে রাত্রিবাস করিয়া প্রাণ দিতে পারিব না।” এই বলিয়া যখন সে আমার বাক্স ও বিছানা নামাইয়া দিবার উদ্যোগ করিল তখন আমি বাধ্য হইয়া তাহাকে চাপিয়া ধরিলাম এবং বলপূর্ব্বক এক্কা হইতে নামাইয় দিলাম। তখন দেহে বল ছিল, স্বচ্ছন্দে দুইটা লোককে কাবু করিতে পারিতাম। এক্কাওয়ালা প্রথমে বলপ্রয়োগ করিয়া দেখিল,কিন্তু যখন বুঝিল যে জোর করিয়া পলাইবার উপায় নাই, তখন সে কাকুতি মিনতি করিতে ও কাঁদিতে আরম্ভ করিল। আমি তখন এক্কার লণ্ঠনটি খুলিয়া লইলাম এবং একহাতে লণ্ঠন ও অপর হাতে এক্কাওয়ালার হাত ধরিয়া প্রাচীরের দিকে অগ্রসর হইলাম। বিদ্যুতের আলোকে দেখিলাম বড় বড় পাথর দিয়া প্রাচীরটি নির্ম্মিত, তাহাতে বড় বড় গাছ জন্মিয়াছে ও স্থানে স্থানে ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। একটা ভগ্নস্থান দিয়া প্রাচীর অতিক্রম করিলাম। ভিতরে কেবল জঙ্গল, স্থানে স্থানে বড় বড় পাথর পড়িয়া আছে, বিদ্যুতের আলোকের সাহায্যে ভগ্ন অট্টালিকা লক্ষ্য করিয়া চলিলাম। প্রায় পনের মিনিট পরে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে উপস্থিত হইলাম। অট্টালিকাটি প্রস্তরনির্ম্মিত, সন্মুখে বড় বড় খিলানযুক্ত বারান্দা; তাহার দুই একটি খিলান পড়িয়া গিয়াছে, কিন্তু অধিকাংশই তখনও দাড়াইয়া আছে। বারালায় উঠিয়া একটু বিশ্রাম করিলাম, তাহার পর ভাবিলাম বিছানা ও বাক্স এক্কায় পড়িয়া থাকিলে ভিজিয়া যাইবে, ঘোড়াটাও পলাইয়া যাইতে পারে, সুতরাং সেগুলিকেও এই স্থানে আনিয়া রাখা উচিত। এক্কাওয়ালা এক যাইতে অসন্মত হওয়ায় অগত্যা তাহার হাত ধরিয়া বাহির হইলাম।

২৬