পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রতীক্ষায়।

জোরে ধাক্কা দিলাম। তখন সে ব্যক্তি উঠিয়া বসিল, কিন্তু আমি তাহাকে দেখিয়া দুইহাত পিছু হটয়া গেলাম, এক্কাওয়াল চীৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠিল।

 খাটিয়ায় যে ব্যক্তি শুইয়াছিল সে পুরুষ নহে, স্ত্রীলোক; অত্যন্ত কৃশাঙ্গী, শুভ্রবর্ণা এবং অতি বৃদ্ধা তাহার চুলগুলি শুভ্র হইয়া গিয়াছে, মুখের চর্ম্ম কুঞ্চিত হইয়া ঝুলিয়া পড়িয়াছে, হস্তপদে যেন অস্থির পর চর্ম্ম ব্যতীত আর কিছুই নাই। তাহার গায়ে একটি মিহি জাফ্রান রঙ্গের চিলা জামা, চুলগুলি তয়ফাওয়ালীদিগের ন্যায় বেণীবদ্ধ ও পৃষ্ঠদেশে লম্বিত। তাহার বয়ঃক্রম অনুমান করা কঠিন; প্রথমে দেখিলে বোধ হয় শতবর্ষের অধিক হইবে, কিন্তু তাহা সত্ত্বেও বৃদ্ধাকে দেখিয়া বোধ হইল, সে বড়ই রূপবতী ছিল। তাহার শীর্ণ মুখমণ্ডলে এককালের ভূবনমোহিনী রূপের ধ্বংসাবশিষ্ট তখনও বিদ্যমান ছিল। বৃদ্ধা উঠিয়া বসিয়া আমাকে দেখিল, দেখিয়া একবার চক্ষু রগড়াইল। প্রথম বোধ হয় ভাবিয়াছিল যে স্বপ্ন দেখিতেছে। তাহার পর জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কে, কোথা হইতে আসিতেছ?” তাহার কণ্ঠস্বর কর্কশ বা ক্ষীণ নহে, মনে হইল অশীতি বৎসর পূর্ব্বে তাহা আরও কোমল, আরও মধুর ছিল। আমি বলিলাম যে আমি পথিক, পথ ভুলিয়া এখানে আসিয়াছি এবং রাত্রির জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করি। বৃদ্ধ অতি সুন্দর উর্দ্দুতে আমাকে বলিল, “তুমি যৌবনবলদৃপ্ত, তুমি বিদেশীয়, তাই এখানে আসিয়াছ। যৌবনে মরণের ভয় থাকে না। তাহা ছাড়া তুমি এ গৃহের পরিচয় জান না, তাহারই জন্য এ গৃহে প্রবেশ করিয়াছ। যদি মরণের ভয় রাখ, যদি স্ত্রীপুত্রের মুখ পুনরায় দেখিবার ভরসা রাখ, তাহা হইলে এখনই চলিয়া যাও।” আমি

৩১