বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

 ইন্দু মেয়েটি বড় শান্ত। জ্ঞানোদয়ের পূর্ব্বে সে অনেক সহ্য করিতে শিখিয়াছিল। সে জানিত যে তাহার অলঙ্কার পরিতে নাই, সজ্জিত হইতে নাই, সমবয়স্কাদিগের সহিত প্রাণ খুলিয়া রঙ্গ রহস্যে যোগ দিতে নাই, আর, কেন নাই, তাহা জিজ্ঞাসা করিতে নাই। সে লক্ষ্য করিয়া দেখিয়াছিল যে, জিজ্ঞাসা করিলে তাহার মাতা ও পিতামহী অধীরা হইয়া পড়েন, পিতা আকুল হইয়া কাঁদিয়া উঠেন, ভ্রাতারা নীরবে নতমস্তকে চলিয়া যায়। তাহার সই বনমালা তাহা অপেক্ষা দু’এক বৎসরের বড়। তাহার কন্যাটি বিবাহযোগ্য হইয়াছে। বনমালা যখন পিত্রালয়ে আসে তখন তাহার কন্যা সইমার আকার দেখিয়া কত কথা জিজ্ঞাসা করে। তাহার মাতা তাহার মুখে চাপা দিয়া লইয়া পলাইয়া যায়। ইন্দু এই সমস্ত দেখিয়া শুনিয়া বুঝিয়াছে যে, যে কাজ তাহার করিতে নাই তাহার কোন কথা জিজ্ঞাসাও করিতে নাই। সে নীরবে জীবন-ভার বহন করিয়া চলিয়া যায়।

 শরতের পূর্ণিমার চন্দ্রকলা লইয়া বিধি বোধ হয় ইন্দুবালাকে গঠন করিয়াছিলেন। সে যখন কিশোরী, কোমরে কাপড় জড়াইয়া পথে পথে খেলিয়া বেড়াইত, তখন গ্রাম্য কৃষকবর্গ তাহার রূপ দেখিয়া বিস্মিত হইত, মনে করিত নীল আকাশ হইতে বিজলী নামিয় তাহাদিগের ধূলিধূসর-পথে খেলিয়া বেড়াইতেছে। কৈশোর অতিক্রম করিয়া সে যখন যৌবনে পদার্পণ করিল, তখন তাহার সৌন্দর্য্য যেন উছলিয়া পড়িতে লাগিল। বসন-ভূষণ-বিহীন, প্রসাধন-শূন্য, তরুণী বিধবা পিতৃগৃহে পুস্প স্তবকের ন্যায় শোভা পাইত; দূর হইতে দেখিলে বোধ হইত যেন যুথিকা গুচ্ছনির্ম্মিতা দেবীপ্রতিমা শুভ্রবস্ত্রাচ্ছাদিতা রহিয়াছে। মাতা লোক

৫২