পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

স্পষ্ট হইয়া উঠিাছে। জ্ঞান হইবার পরে তাহার বড় ইচ্ছা হইত যে, অন্ততঃ স্বপ্নেও একবার স্বামীকে দেখে; কিন্তু তাহার সে আশা কখনও পূর্ণ হয় নাই। আজ সেই পুরাতন ছবিখানাকে নূতন হইতে দেখিয়া সে বড়ই আনন্দিতা হইল। ধীরে ধীরে সমস্ত চিত্রখানি পরিস্ফুট হইয়া উঠিল! বিস্মিত হইয়া ইন্দু চাহিয়া দেখিল, চিত্রে অপূর্ব্ব দেবমূর্ত্তি দেখা যাইতেছে। বিচিত্র বসন পরিহিত শ্যামবর্ণ যুবামূর্ত্তি বৃক্ষতলে দাঁড়াইয়া বংশীবাদন করিতেছে; কিন্তু তাঁহার চক্ষুদ্বয় ও ক্রযুগল তাহার পূর্ব্বপরিচিত।

 ক্রমে বাঁশীও সজীব হইয়া উঠিল। একি! বাঁশীর স্বরও যে তাহার পূর্ব্ব-পরিচিত। আর একদিন যমুনা-সৈকতে চন্দ্রকিরণে বাঁশী গলিয়া সুধাস্রোত প্রবাহিত হইয়াছিল। সেদিনও সে স্বপ্নে দেখিয়াছিল যে, কদম্বমূলে বাঁশী-হাতে শ্যামসুন্দর দাঁড়াইয়া আছেন। কিন্তু তাহার সেদিনের শ্যামসুন্দর যুগলভ্রুর নীচে দুটি চক্ষু মাত্র। আজি সে শ্যামসুন্দরের পূর্ণরূপ দেখিতে পাইয়াছে। তাহার ক্লান্তি দূর হইল, মন প্রফুল্ল হইয়া উঠিল। সে ভাবিতেছিল যে, সে তাহার মৃত পতিকেই দেখিতে পাইতেছে। একবার ভাবিল এই রূপ ত কতচিত্রে দেখিয়াছি, কতবার বংশী হস্তে যশোদা-নন্দনের চিত্র দেখিয়াছি। ইহাই কি সেই রূপ? আবার ভাবিল—সেই নয়নদ্বয়, সেই আকর্ণলম্বিত যুগ্ম-ভ্রু কোথা হইতে আসিবে? শয্যায় বসিয়া ইন্দু এক মনে চিত্র দেখিতেছিল, অকস্মাৎ তাহার দেহের ভিতর দিয়া বিদ্যুৎ প্রবাহিত হইল; বিক্ষিত হইয়া ইন্দু শুনিল, বাঁশী গান ধরিয়াছে, মানুষের মত কথা কহিতেছে-

৫৮