পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আহ্বান।

“নিকুঞ্জে দখিণা বায়, করিছে হায় হায়,
লতা পাতা হেলে দুলে, ডাকিছে ফিরে ফিরে,
দুজনে দেখা হল মধু যামিনীরে।”

 তাহা হইলে পিতার কথা সত্য, শ্যামসুন্দর সত্যই তাহার পতি। ইন্দুর মাথা ঘুরিয়া গেল। সে স্থির করিল যে সে একবার মাত্র দেখিবে। একবার—দুইবার নহে। সে দূর হইতে কেবল একবার দেখিয়া আসিবে। তাহার দেখিবার ইচ্ছা বড়ই প্রবল হইয়া উঠিল; সে মনে মনে ভাবিল সে ত কেবল দেখিতে চাহে, চরণ প্রান্ত স্পর্শ করিবার ভরসাও রাখে না। আর সকলে স্বামীকে লইয়া মৃন্ময় পুত্তলিকার ন্যায় খেলা করিয়া পাকে, সে কেবল দেখিতে চাহে—

“দুজনে দেখা হ'ল মধু যামিনীরে,
কোন কথা কহিল না চলিয়া গেল ধীরে—”

 বাঁশী কাহার কথা কহিতেছে? একি তাহার কথা? স্বর ক্রমশঃ কাছে, আসিতেছে। ইন্দু উঠিল, বহুকষ্টে কাপড় খানা জড়াইয়া লইয়া ধীরে ধীরে ঘর হইতে বাহির হইল। বাহিরে জ্যোছনার রজত ধারায় জগৎ হাসিতেছিল, শ্যামা রজনী পরাস্ত হইয়া বৃক্ষতলে ও পর্ব্বতের সানুদেশে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিল, মৃদু মন্দ মারুত হিল্লোলে গঙ্গাবক্ষ নাচিয়া বেড়াইতেছিল, তাহার উপরে জ্যোছনালোক পড়িয়া আলোকমালার সৃষ্টি করিতেছিল। জগৎ নীরব নিস্তব্ধ; সেই বিশাল নীরবতা ভঙ্গ করিয়া দূরে কে গাহিয়া উঠিল—

“দুজনের আঁখি-বারি গোপনে গেল ঝরে,
দুজনের প্রাণের কথা প্রাণেতে গেল মরে;

৫৯