পাতা:গোড়ায় গলদ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s ど গোড়ায় গলদ বিনোদবিহারী । তা হলে তোমার দুটি কান সামলাতেই দিন বয়ে যেত । ভূপতি। বিনোদ, তবে ওঠো, সময় হল। নলিনাক্ষ । এই তবে আমাদের অবিবাহিত বন্ধুত্বের শেষ মিলন ! জীবনস্রোতে তুমি এক দিকে যাবে আমি এক দিকে যাব । প্রার্থনা করি, তুমি সুখে থাকে । কিন্তু মুহুর্তের জন্যে ভেবে দেখো বিনু, এই মরুময় জগতে তুমি কোথায় যাচ্ছ— চন্দ্ৰকান্ত। বিনু তুই বল, মা, আমি তোমার জন্যে দাসী আনতে যাচ্ছি। তা হলে কনকাঞ্জলিটা হয়ে যায়। শ্রীপতি। এইবার তবে উলু আরম্ভ হোক । সকলে উলুর চেষ্টা । নেপথ্যে উলু ও শঙ্খ -ধ্বনি নিমাই। ঐ-যে উলুর জোগাড় করে রেখেছ, এতক্ষণে একটুখানি বিয়ের সুর লাগল। নইলে কতকগুলো মিনসেয় মিলে যেরকম বেসুরো লাগিয়েছিলে, বরযাত্রা কি গঙ্গাযাত্রা কিছু বোঝবার জো ছিল না। [সকলের প্রস্থান ইন্দুমতী ও ক্ষান্তমণির প্রবেশ ক্ষান্তমণি। শুনলি তো ভাই, আমার কর্তাটির মধুর কথাগুলি ? ইন্দুমতী। কেন ভাই, আমার তো মন্দ লাগে নি। ক্ষান্তমণি। তোর মন্দ লাগবে কেন। তোর তো আর বাজে নি। যার বেজেছে সেই জানে। ইন্দুমতী। তুমি যে আবার একেবারে ঠাট্টা সইতে পার না। তোমার স্বামী কিন্তু ভাই, তোমাকে সত্যি ভালোবাসে। দিনকতক বাপের বাড়ি গিয়ে বরং পরীক্ষা করে দেখো-না— ক্ষান্তমণি। তাই একবার ইচ্ছা করে, কিন্তু জানি থাকতে পারব না। তা যা হোক, এখন তোদের ওখানে যাই। ওরা তো বউবাজারের রাস্তা ঘুরে যাবে, সে এখনো ঢের দেরি আছে। ইন্দুমতী। তুমি এগোও ভাই, আমি তোমার স্বামীর এই বইগুলি গুছিয়ে দিয়ে যাই। (ক্ষান্তমণির প্রস্থান ) আজ ললিতবাবু এমন চুপচাপ গভীর হয়ে বসেছিলেন। কী কথা ভাবছিলেন কে জানে। সত্যি আমার জানতে ইচ্ছে করে। থেকে থেকে একটা খাতা খুলে দেখছিলেন। সেই খাতাটা ঐ ভুলে ফেলে গেছেন। ওটা আমাকে দেখতে হচ্ছে । ( খাতা খুলিয়া) ও মা ! এ যে কবিতা । কাদম্বিনীর প্রতি ! আ-মরণ। সে পোড়ারমুখী আবার কে। জল দিবে অথবা বঙ্গ, ওগো কাদম্বিনী, হতভাগ্য চাতক তাই ভাবিছে দিনরজনী ! ইস ! ভারি যে অবস্থা খারাপ দেখছি। এত বেশি ভাবনায় কাজ কী ! আমি যদি পোড়াকপালী কাদম্বিনী হতুম তা হলে জলও দিতুম না বন্ধও দিতুম না, হতভাগ্য চাতকের মাথায় খানিকটা কবিরাজের তেল ঢেলে দিতুম। খেয়ে দেয়ে তো কাজ নেই– কোথাকার কাদম্বিনীর নামে কবিতা, তাও আবার দুটো লাইন ছন্দ মেলে নি । এর চেয়ে আমি ভালো লিখতে পারি। আর কিছু দাও বা না দাও, অয়ি অবলে সরলে, ধাচি সেই হাসিভরা মুখ আর একবার দেখিলে। আহা-হা-হা-হা ! অবলে সরলে। কোন এক বেহায়া মেয়ে ওঁকে হাসিভরা কালামুখ দেখিয়ে দিয়েছিল, এক তিল লজ্জাও করে নি। বাস্তবিক, পুরুষগুলো ভারি বোকা। মনে করলে ওঁর প্রতি ভারি অনুগ্রহ করে সে হেসে গেল— হাসতে নাকি সিকি পয়সার খরচ হয়। দাতগুলো বোধ হয় একটু ভালো দেখতে ছিল তাই একটা ছুতো করে দেখিয়ে দিয়ে গেল। কই আমাদের কাছে তো কোনো কাদম্বিনী সাত পুরুষে এমন করে হাসতে আসে না। অবলে সরলে ! সত্যি বাপু, মেয়ে জাতটাই ভালো নয়।