পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫

প্রকাশিত প্রবন্ধে একটি উৎকীর্ণ লিপির উল্লেখ করিয়াছেন। তদনুসারে শিষ্যপরম্পরা নিম্নলিখিত রূপ:—

ধরমনাথ
গরীবনাথ
পন্থনাথ
ভিখারীনাথ
প্রভাতনাথ[১]

 ভিখারীনাথের সময় ১৫৪৫ সংবৎ এবং প্রভাতনাথের সময় ১৬৬৫ সংবৎ বলিয়া কথিত হইয়াছে। এই হিসাবে গোরক্ষনাথ খৃঃ চতুর্দ্দশ বা পঞ্চদশ শতকের লোক হইয়া পড়েন। ১৫ শতকে বর্ত্তমান কবীরের সহিত গোরক্ষনাথের তর্কযুদ্ধের বিবরণ উত্তর ভারতে প্রচলিত আছে। ইহা সম্ভবতঃ কাল্পনিক। মহারাষ্ট্র-ভাষায় রচিত জ্ঞানেশ্বরী গ্রন্থে যে শিষ্য-পরম্পরার উল্লেখ আছে, তাহা হইতে সাধারণ নিয়ম অনুসারে হিসাব করিতে গেলে গোরক্ষনাথকে দ্বাদশ শতাব্দীর লোক বলিয়া মনে হইবে। শুনা যায় তিব্বতীয় গ্রন্থ নাড়াচাড়া করিলে গোরক্ষনাথকে দশম শতাব্দীর লোক বলিয়া স্থির করাও সম্ভব হইয়া পড়ে। শিষ্য-পরম্পরার হিসাব মুদ্রিত গ্রন্থে বা উৎকীর্ণ লিপিতে থাকিলেও নিরাপদ নহে। দলপতরাম প্রাণজীবন থক্কর প্রকাশিত প্রবন্ধেই এক শিষ্যের সময় ১৫৪৫ সংবৎ ও তাঁহার পরবর্ত্তী শিষ্যের সময় ১৬৬৫ সংবৎ বলিয়া লিখিত হইয়াছে। সিদ্ধাগণ যদি এতই দীর্ঘজীবী হন তাহা হইলে হিসাবের কাজটা বড়ই শক্ত হইয়া পড়ে। জ্ঞানেশ্বরীর প্রমাণে এরূপ হিসাব গোরক্ষনাথকে নবম শতাব্দীতে আনিয়া ফেলে। পালবংশীয় রাজা দেবপালের সময়ে গোরক্ষনাথের আবির্ভাব এরূপ মতও প্রচারিত হইয়াছে।[২] এদিকে আবার গোরক্ষনাথকে অত্যন্ত প্রাচীন করিবার প্রবাদ এত অধিক যে, তাহা আলোচনা করিতে গিয়া ইতিহাস হতাশ হইয়া প্রত্যাবর্ত্তন করিতে বাধ্য হয়। গ্রীয়ার্সন এক নেপালীয় প্রবাদের উল্লেখ করিয়াছেন; তদনুসারে পঞ্চপাণ্ডবের মহা প্রস্থানকালে ভীমসেন ব্যতীত আর সকলেই প্রাণত্যাগ করিলেন। তখন গোরক্ষনাথ ভীমসেনকে নেপালের রাজা করিয়া দিলেন। পশ্চিম ভারতের প্রবাদানুসারে গোরক্ষনাথ সত্যযুগে পাঞ্জাবে, ত্রেতায় গোরখপুরে, দ্বাপরে হরমুজে এবং কলিতে কাঠিয়াগড়ে অবস্থিত। রসরত্নসমুচ্চয় নামক কবিরাজী রাসায়ণিক গ্রন্থে নিত্যনাথ, গোরক্ষনাথ প্রভৃতির নামোল্লেখ আছে। এই গ্রন্থের প্রণেতা আপনাকে বাগ্‌ভট বলিয়া পরিচয়

  1. Indian Antiqnary, Vol. VII, p. 40.
  2. Baealer - Archive (1916).