পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আহারান্তে হরিমোহিনী তাঁহার মাদুরের উপর শুইয়া নিদ্রার উপক্রম করিতেছেন, এবং সুচরিতা পিঠে মুক্ত চুল মেলিয়া দিয়া শতরঞ্চে বসিয়া কোলের উপর বালিশ লইয়া এক মনে কী পড়িতেছে। সম্মুখে আরো কয়খানা বই পড়িয়া আছে।

 ললিতাকে হঠাৎ ঘরে ঢুকিতে দেখিয়া সুচরিতা যেন লজ্জিত হইয়া প্রথমটা বই বন্ধ করিল, পরক্ষণে লজ্জার দ্বারাই লজ্জাকে দমন করিয়া বই যেমন ছিল তেমনি রাখিল। এই বইগুলি গোরার রচনাবলী।

 হরিমোহিনী উঠিয়া বসিয়া কহিলেন, “এসো, এসো মা, ললিতা এসো। তোমাদের বাড়ি ছেড়ে সুচরিতার মনের মধ্যে কেমন করছে সে আমি জানি। ওর মন খারাপ হলেই ঐ বইগুলো নিয়ে পড়তে বসে। এখনই আমি শুয়ে শুয়ে ভাবছিলুম তোমরা কেউ এলে ভালো হয়— অমনি তুমি এসে পড়েছ— অনেক দিন বাঁচবে মা!"

 ললিতার মনে যে কথাটা ছিল সুচরিতার কাছে বসিয়া সে একেবারেই তাহা আরম্ভ করিয়া দিল। সে কহিল, “সুচিদিদি, আমাদের পাড়ায় মেয়েদের জন্যে যদি একটা ইস্কুল করা যায় তা হলে কেমন হয়।”

 হরিমোহিনী অবাক হইয়া কহিলেন, “শোনো একবার কথা! তোমরা ইস্কুল করবে কী!"

 সুচরিতা কহিল, “কেমন করে করা যাবে বল্‌। কে আমাদের সাহায্য করবে? বাবাকে বলেছিস কি?”

 ললিতা কহিল, “আমরা দুজনে তো পড়াতে পারব। হয়তো বড়দিদিও রাজি হবে।”

 সুচরিতা কহিল, “শুধু পড়ানো নিয়ে তো কথা নয়। কী রকম করে ইস্কুলের কাজ চালাতে হবে তার সব নিয়ম বেঁধে দেওয়া চাই, বাড়ি ঠিক করতে হবে, ছাত্রী সংগ্রহ করতে হবে, খরচ জোগাতে হবে। আমরা দুজন মেয়েমানুষ এর কী করতে পারি!"

 ললিতা কহিল, “দিদি, ও কথা বললে চলবে না। মেয়েমানুষ হয়ে

৩৪৮