পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তিনি কথা পাড়িবার সুবিধা করিয়া দিবার জন্য কহিলেন, “মা, তুমি এসেছ বড় খুশি হলুম। এইমাত্র বিনয় এখানে ছিলেন; কাল তিনি তোমাদের সমাজে দীক্ষা নেবেন আমার সঙ্গে সেই কথাই হচ্ছিল।”

 ললিতা কহিল, “কেন তিনি দীক্ষা নিতে যাচ্ছেন? তার কি কোনো প্রয়োজন আছে?”

 আনন্দময়ী আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “প্রয়োজন নেই মা?”

 ললিতা কহিল, “আমি তো কিছু ভেবে পাই নে।”

 আনন্দময়ী ললিতার অভিপ্রায় বুঝিতে না পারিয়া চুপ করিয়া তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন।

 ললিতা মুখ নিচু করিয়া কহিল, “হঠাৎ এরকম ভাবে দীক্ষা নিতে আসা তাঁর পক্ষে অপমানকর। এ অপমান তিনি কিসের জন্যে স্বীকার করতে যাচ্ছেন?”

 কিসের জন্যে! সে কথা কি ললিতা জানে না? ইহার মধ্যে ললিতার পক্ষে কি আনন্দের কথা কিছুই নাই?

 আনন্দময়ী কহিলেন, “কাল দীক্ষার দিন, সে পাকা কথা দিয়েছে- এখন আর পরিবর্তন করবার জো নেই, বিনয় তো এই রকমই বলছিল।”

 ললিতা আনন্দময়ীর মুখের দিকে তাহার দীপ্ত দৃষ্টি রাখিয়া কহিল, “এসব বিষয়ে পাকা কথার কোনো মানে নেই, যদি পরিবর্তন আবশ্যক হয় তা হলে করতেই হবে।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “মা, তুমি আমার কাছে লজ্জা কোরো না, সব কথা তোমাকে খুলে বলি। এই এতক্ষণ আমি বিনয়কে বোঝাচ্ছিলুম, তার ধর্মবিশ্বাস যেমনই থাক্ সমাজকে ত্যাগ করা তার উচিতও না, দরকারও না। মুখে যাই বলুক সেও যে সে কথা বোঝে না তাও বলতে পারি নে। কিন্তু মা, তার মনের ভাব তোমার কাছে তো অগোচর নেই। সে নিশ্চয় জানে, সমাজ পরিত্যাগ না করলে তোমাদের সঙ্গে তার যোগ হতে পারবে না। লজ্জা কোরো না মা, ঠিক করে বলে দেখি এ কথাটা কি সত্য না?”

৪৫৫