পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

তার বিবাহ-ব্যাপারে জড়িত করে সমাজের সঙ্গে তোমার বিচ্ছেদকে সে যেন আর বাড়িয়ে না তোলে— কেননা এ তার পক্ষে অত্যন্ত অন্যায় এবং স্বার্থপরতার কাজ হবে।”

 আনন্দময়ী হাসিয়া কহিলেন, “আচ্ছা, তুই যা করতে পারিস করিসতাকে বল্ গে যা, তার পরে আমি দেখব এখন।”


 গোরা চলিয়া গেলে আনন্দময়ী অনেক ক্ষণ বসিয়া চিন্তা করিলেন। তাহার পর ধীরে ধীরে উঠিয়া তাঁহার স্বামীর মহলে চলিয়া গেলেন।

 আজ একাদশী, সুতরাং আজ কৃষ্ণদয়ালের স্বপাকের কোনো আয়োজন নাই। তিনি ঘেরণ্ডসংহিতার একটি নূতন বাংলা অনুবাদ পাইয়াছিলেন; সেইটি হাতে লইয়া একখানি মৃগচর্মের উপর বসিয়া পাঠ করিতেছিলেন।

 আনন্দময়ীকে দেখিয়া তিনি ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। আনন্দময়ী তাঁহার সহিত যথেষ্ট দুরত্ব রাখিয়া ঘরের চৌকাঠের উপর বসিয়া কহিলেন, “দেখো, বড়ো অন্যায় হচ্ছে।”

 কৃষ্ণদয়াল সাংসারিক ন্যায়-অন্যায়ের বাহিরে আসিয়া পড়িয়াছিলেন; এই জন্য উদাসীনভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী অন্যায়?”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “গোরাকে কিন্তু আর এক দিনও ভুলিয়ে রাখা উচিত হচ্ছে না, ক্রমেই বাড়াবাড়ি হয়ে পড়ছে।”

 গোরা যেদিন প্রায়শ্চিত্তের কথা তুলিয়াছিল সেদিন কৃষ্ণদয়ালের মনে এ কথা উঠিয়াছিল; তাহার পরে যোগসাধনার নানাপ্রকার প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়িয়া সে কথা চিন্তা করিবার অবকাশ পান নাই।

 আনন্দময়ী কহিলেন, “শশিমুখীর বিয়ের কথা হচ্ছে; বোধ হয় এই ফাল্গুন মাসেই হবে। এর আগে বাড়িতে যতবার সামাজিক ক্রিয়াকর্ম হয়েছে আমি কোনো-না-কোনো ছুতায় গোরাকে সঙ্গে করে অন্য জায়গায় গেছি। তেমন বড় কোনো কাজও তো এর মধ্যে হয় নি। কিন্তু এবার শশীর বিবাহে ওকে নিয়ে কী করবে বলো। অন্যায় রোজই বাড়ছে, আমি

৫০৫